সময় দুপুর ১২টা বেজে ১০ মিনিট । রমনা পার্কের মধ্যে মানুষের ভীড় খুব একটা নেই। হঠাৎ করেই পার্কের মধ্যে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের বাঁশির শব্দ। পার্কে অবস্থানরত সকলকে যেভাবে সম্ভব পার্ক থেকে বের করছেন তারা। সাড়ে ১২টার মধ্যে খালি করতে হবে পুরো পার্ক। দুপুর ১২টা বাজলেই এ চিত্র দেখা যায় রমনা পার্কে। সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় রাজধানীর এই বিনোদন কেন্দ্র। তবে এই বিষয়ে জানেন না ঘুরতে আসা বেশির ভাগ মানুষ।
কামরাঙ্গীরচর থেকে রমনা পার্কে ঘুরতে আসা একজন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আসছি ২০ মিনিট হইলো। জানতামও না যে এমন হুট করে বন্ধ করে দেয়। এত দূর থেকে ঘুরতে এসে যদি সময় পাই ২০ মিনিট ,তখন তো ভালো লাগবে না এটাই স্বাভাবিক।’
এদিকে প্রথমবার ১২টা ১০ মিনিটে সতর্ক করে চলে যান এক আনসার সদস্য। পার্কের মধ্যে কিছুক্ষণ হতাশ হয়ে বসে থাকার পর বেরিয়ে যান কামরাঙ্গীর চর থেকে আসা এই দর্শনার্থীরা।
এবার আমরা হাঁটি পার্কের ভেতরের দিকে, নিরাপত্তাকর্মীদের এই দেড়ঘণ্টার জন্য পার্ক ফাঁকা করার অভিযান দেখতে। দূর থেকে দেখা যায় এক যুগলকে লাঠি নিয়ে শাসাচ্ছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। কিছুক্ষণ তর্কবিতর্কের পর সেখান থেকে সরে যান দুপক্ষই। তবে এ বিষয় নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
এবার আমরাও হাঁটি প্রধান ফটকের দিকে। সেখানে কেউ পার্ক থেকে বের করে দেয়ার জন্য আবার কেউ পার্কে প্রবেশ করতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে যান কর্তৃপক্ষের ওপর।
ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, ‘পার্ক তো জনগণের জন্য দিয়েছে, অন্য কারও জন্য তো দেয় নাই। এটা তো সরকারি জায়গা। সেই জায়গায় জনগণ কেন প্রবেশ করতে পারবে না। আমার জ্যাম ঠেলে আসতেই দুইঘণ্টা লেগে গেছে। এসে যদি ঢুকতেই না পারি। এই পার্কে জনগণের লাভ কি হলো।’
অন্যদিকে এক ব্যক্তিকে দেখা গেল যিনি ঘুরতে নন, এসেছেন সহজে বেইলি রোড পৌঁছানোর জন্য। শেখ জামাল জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স সংলগ্ন রমনা পার্কের গেটের সামনে এসে পার্ক বন্ধ দেখে হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকেন নোটিশ বোর্ডের দিকে। এরপর হতাশ হয়ে বলেন, ‘ভেবেছিলাম ভেতর দিয়ে সহজে চলে যাব। এদিকে কোনো রিকশাও শান্তিনগর যেতে রাজি হচ্ছে না।’ ক্ষুব্ধ হয়ে আরও বলেন, বন্ধ রাখার বিষয়টি টিভিতে দেয়া উচিত যাতে মানুষ জানতে পারে।
এদিকে রমনা পার্কের আশেপাশে রয়েছে অনেকগুলো হাসপাতাল। দূর-দূরান্ত থেকে এসে সারাদিন হাসপাতালে অপেক্ষা করা যখন সম্ভব হয় না, তখন ভরসা হয়ে দাঁড়ায় রমনা পার্ক। এক্ষেত্রে বাধার মুখে তারাও।
গেটের সামনে আমরা অপেক্ষা করছিলাম পুনরায় দুপুর দুইটায় গেট খোলার জন্য। এরই মাঝে প্রধান ফটকের নিরাপত্তাকর্মী প্রবেশ করতে দেন একজনকে। তার কিছুক্ষণ পর একসঙ্গে বেশ কয়েকজনকে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নিরাপত্তাকর্মী উত্তর দেন দায় এড়িয়ে। বলেন, ‘শুধুমাত্র গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মীরাই প্রবেশ করতে পারবেন এই সময়। তবে এরই মধ্যে আরও একজনকে প্রবেশ করতে দিলে আমরা এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যকে। তিনি বলেন, ‘এই লোক পুলিশ। রাজারবাগ যাবে, অনুরোধ করছে তাই ছাড়ছি।’
অর্থাৎ বোঝা গেল অনুরোধ করে চাইলেই প্রভাবশালী কেউ ঢুকতে পারেন পার্ক বন্ধ থাকাকালীন সময়ে। এরপর নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের যে নোটিশ বোর্ড দেখিয়ে দিলেন সেখানে লেখা আছে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা ৩০ পর্যন্ত এবং এরপর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে পার্ক। অর্থাৎ নোটিশ অনুযায়ী দিনে দেড়ঘণ্টা বন্ধ থাকে রমনা পার্ক। যদিও তা গড়ে দুই ঘণ্টাই বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জনসাধারণের এসব অভিযোগ নিয়ে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল- ১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, মো. জামিলুর রহমান সাথে। দেড় ঘণ্টা ধরে পার্ক বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। তিনি বলেন, দুইবেলা পার্ক পরিষ্কার করার জন্য দুপুরে পার্ক বন্ধ রাখা। শুধু রাতে পরিষ্কার করে পার্ক পুরোপুরি সুন্দর রাখা সম্ভব নয়। তবে জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এই বন্ধ রাখা নিয়ে পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান এখনই কোনো পরিকল্পনা নেই।
এবার একটু ফেরা যাক বছরের শুরুর দিকে। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে প্রথমসারির একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রমনা পার্কে এসে সময় কাটায়। তা ঠেকানোর জন্যই দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পার্কে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।’
৫ মাস পরে এসে গণপূর্ত বিভাগ বলছে দুবেলা পরিষ্কারের জন্যই বন্ধ করা হয় পার্ক। উত্তর যাই হোক এই সিদ্ধান্তে ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ, ভোগান্তি কমাতে সারাদিন পার্ক খোলা রাখার দাবি তাদের।