অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ১২:৩৩ এএম
প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এবার ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে পারবেন না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘যেভাবেই হোক এ দেশে নির্বাচন হবেই’ গতকাল ঢাকার কাওলায় আওয়ামী লীগের সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রবিবার দুপুরে এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ যারা এভাবে কথা বলে, যেভাবেই হোক নির্বাচন হবে। নির্বাচন তো আমরাও চাই এবং সেটা জনগনের অধিকারের জন্য চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে সেখানে জনগন তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”
‘‘ শেখ হাসিনা চাইলেন যে, বিনা ভোটারের মাধ্যমেই তিনি নির্বাচিত হবেন… সেটা এবার হবে না। ২০১৪ সালে যা করতে পেরেছেন, ২০১৮ তে যেটা করতে পেরেছেন এবার ২০২৪ সালে সেই নির্বাচন আপনি করতে পারবেন না। কারণ এবার মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে করে সেটা আর সম্ভব হবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যেটা আমি আগেই বলেছি আপনাদেরকে যে, আমরা একা নই। যে কথাটা এখানে(সেমিনারে) আছে যে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তি এখানে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা বিশ্ব তাদের কমিটেড টু ডেমোক্রেসি… এটার ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে।
তারা যে কমিটমেন্টে আছে গণতন্ত্রের প্রতি,সেই কমিটমেন্টে কিন্তু আমাদেরকে সামাল দিতে পারছি, সেই কমিটমেন্ট আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে আমরা যারা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি এটাকে সামনে আরও দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যেতে হবে।”
‘‘ আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেখানো পথ, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের দেখানো পথ যেটা তিনি বার বার বলছেন যে, ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথেই ফয়সালা করার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি, চূড়ান্ত বিজয় আমরা অবশ্যই অর্জন করতে সক্ষম হবো সেখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তি সম্ভব হবে।”
‘উনার সোনার হরিণ চাই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আসল কথা হচ্ছে, উনি(শেখ হাসিনা) কালকে বলে দিয়েছেন তোমরা যে যা বলো ভাই আমার সোনার হরিণ চাই। অর্থাত যে যাই বলুক, মার্কিন যুক্ত যাই বলুক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাই বলুক, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলি, উনার ওই সোনার হরিণ চাই।অর্থাত ক্ষমতায় কাউকে যেতে দেবো না। টোটাল সংকটটা ওই জায়গায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনের কাছে পাঁচটি সুপারিশ রেখেছে। গত ৭ অক্টোবর মার্কিন প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছিল এবং রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নির্বাচন কমিশনসহ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘‘ আজকের প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতার জরে দখল করে, রাষ্ট্র ব্যবহার করে, জোর করে বসে আছেন তিনি এবারও যখন নির্বাচন করবেন যে, নির্বাচন আসছে তখন কিন্তু একই কায়দায় তিনি তফসিল পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছেন।
মান্না সাহেব(মাহমুদুর রহমান মান্না) অত্যন্ত সুন্দর করে বলেছেন, সিদ্ধান্ত আমাদের এদেশের মানুষের, জনগনের সিদ্ধান্ত।তারা ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলো একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মানের জন্য সেই বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ করার জন্য আবার একটা লড়াই-সংগ্রামে নেমেছে।
আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই সংগ্রামে নেমেছি… শুধু আমরা না দেশের সকল দেশপ্রেমিক যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে তাদের সকলকে এক সাথে নিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবার জন্যে রাস্তায় নেমে গেছি।”
‘‘ আমাদের মধ্যে কিছু কিছু লোক আছেন যারা সবসময় হতাশায় ভোগেন। আমার একটা বিশ্বাস যে, মাঠে থাকলে এই হতাশা আসে না। আমি তো আমার দলের কোনো মানুষের মধ্যে, কর্মীদের মধ্যে, নেতাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখি না, আমাদের সাথে যারা আছেন যুগত আন্দোলন যারা করছেন তাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখি না। আমরা বিশ্বাস করি এই সংগ্রামে অবশ্যই আমরা অবশ্যই জয়লাভ করবো কারণ আমরা সত্যের পথে আছি, সঠিক পথে আছি।”
গুলশানে লেকশোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভুমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়।
অনুষ্ঠানে ‘নো কমেন্ট’ সম্পাদিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন আলোকচিত্র সাংবাদিক বাবুল তালুকদার।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে এই গ্রস্থটি প্রকাশ করা হয়। কলি প্রকাশনীর এই গ্রস্থটি মূল্য হচ্ছে ৯৯৯ টাকা।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ কি হতে যাচ্ছে আগামী দিনগুলোতে। হাতে খুব বেশি সময় নাই, দুই মাস সময়। দুই মাসের মধ্যে লড়াই একটা চূড়ান্ত জায়গা যেতে হবে। সবাই জানি, পূজার পরে বৃহত্তর আন্দোলন। এমন আন্দোলন যাতে সরকার পড়ে যেতে পারে… তাই তো।”
‘‘ আমরা কি জানি সেই বৃহত আন্দোলনটা কি? ইজ ইট বিগগার দ্যান শ্রীলংকা, ইজ ইট বিগগার দ্যান মিয়ানমার, ইজ ইট বিগগার দেন দিল্লী রিজনস…ওই নব্বইদিন ধরে যে অবরোধ করে রেখেছিলো … ততদূর পর্যন্ত।
আমাদের খুবই সূক্ষ্ণভাবে সেটা রচনা করা দরকার। এখানে যদি মনে করেন আন্তর্জাতিক শক্তি সাপোর্টিজ বা সমর্থন থাকবে। তবে এখানকার বে্ইল(ঘন্টা) আপনাকেই বাজাতে হবে। এই বেইল(ঘন্টা) বাজানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বে যোগ্যতা সহ অনেক কিছু বিবেচনায় আসে। এই পর্যন্ত এই নেতৃত্বে বিএনপি ওয়ান্ডারফুল। অধৈর্য হওয়ার কিছু নেই। বিজয় আমাদের অবিসম্ভাবী।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, নাসের রহমান, হারুনুর রশীদ, শামা ওবায়েদ, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমূখ নেতারা ছিলেন।