মে ২৮, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
‘ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় চাই’—এই রাজনৈতিক স্লোগানটি গত কয়েক মাসে ফেসবুকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি কোন রাজনৈতিক দল প্রচার করছে না। প্রচার করছে –খাবার, প্রসাধনী, পোশাক ও ব্যক্তিগত ভ্লগের মতো নানা ধরনের ফেসবুক পেজ। এই স্লোগান ব্যবহার করে তারা বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে—লাইক ও জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কৌশল হিসেবে।
তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ডিসমিসল্যাব বলছে, এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে ৪৭টি ভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে এমন ৫৫টি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। গবেষকেরা বাংলা কিওয়ার্ড—‘ইউনূস’, ‘ইউনুস’, এবং ‘৫ বছর’ ব্যবহার করে মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে এসব বিজ্ঞাপন খুঁজে পান।
স্লোগান, কিন্তু রাজনীতি নয়
ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই পেজগুলোর ৯০ শতাংশ আগে কখনও রাজনৈতিক কিছু পোস্ট করেনি। অর্থাৎ, এ ধরনের স্লোগান তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে।
মেটার নিয়ম অনুযায়ী, জনমত প্রভাবিত করতে পারে এমন যেকোনো বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে জানাতে হয়—কে এটি দিচ্ছে। অথচ, এই ৫৫টি বিজ্ঞাপনের কোনোটিতেই এমন ডিসক্লেইমার ছিল না। মেটা কিছু বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিলেও গবেষণা চলাকালীন বেশিরভাগই সক্রিয় ছিল।
রাজনীতির মোড়কে ব্যবসা
১৩ ও ১৪ মে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্ট পেজ ‘দ্য টেস্টি অ্যাপ্রন’ দুটি বিজ্ঞাপন চালায়। একটিতে লেখা ছিল, ‘আপনি যদি চান ড. ইউনূস পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকুক, তাহলে ডান পাশে লাইক অপশনে ক্লিক করুন।’
বিজ্ঞাপনের নিচে লাইক বাটনও ছিল। অথচ, এই পেজের অন্য ২০টি পোস্টে কোনো রাজনৈতিক বিষয় ছিল না।
আরেকটি উদাহরণ, ‘মোটিভ ডিজিটাল’ নামের পেজ ৬ মে একটি পোস্টে লেখে, ‘নেতৃত্বে পরিবর্তন মানেই ভবিষ্যতের পরিবর্তন।’ এই পেজসহ ‘মি. ইসমাইল’ নামের আরেকটি পেজে এমন পোস্টের কারণে মেটা পরে তাদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেয়।
বিজ্ঞাপনদাতারা কারা?
এই ৪৭টি পেজের মধ্যে—
· ৩০টি (৬৪%) কোনো না কোনো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত -খাবার, পোশাক, প্রসাধনী, স্বাস্থ্যসেবা বা মৌসুমি ফল প্রভৃতি।
· ৮টি ছিল ব্যক্তিগত বা ব্লগ ধরনের।
· ২টি নিজেদের মিডিয়া আউটলেট হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।
· বাকি পেজগুলো ‘পাবলিক ফিগার’ বা ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’ হিসেবে তালিকাভুক্ত।
লাইক ও ফলোয়ারের খোঁজে রাজনৈতিক মোড়
গড়ে প্রতি পেজে ৩৫ হাজার লাইক এবং ৩৭ হাজার ফলোয়ার ছিল। নতুন-পুরনো উভয় ধরনের পেজই এই স্লোগানকে ব্যবহার করেছে নজর কাড়ার উপায় হিসেবে।
সবচেয়ে বেশি লাইক ছিল ‘খবর২৪’ নামের একটি সংবাদ পেজে—যার ফলোয়ার প্রায় ৩ লাখ ৪৩ হাজার। পেজটি ফটো কার্ড পোস্ট করে ও টাইমস২৪–এর লিংক শেয়ার করে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম লাইক প্রিমিয়াম বিডি নামের একটি নতুন পেজের—মাত্র ১১ জন ফলোয়ার।
৪৭টি পেজের মধ্যে ২৪টি বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত, একটি ইতালি থেকে এবং আরেকটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে যৌথভাবে পরিচালিত হয়।
পুরনো কৌশল, নতুন ব্যবহার
ডিসমিসল্যাব বলছে, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ছবি ও রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে লাইক বাড়ানোর চেষ্টা নতুন নয়। ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একটি পেজে চালানো হয় এমন বিজ্ঞাপন, ‘ভোট চলছে—খালেদা জিয়াকে জিতিয়ে দিতে চাইলে লাইক দিন।’
২০২৪ সালে আরেকটি বিজ্ঞাপনে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ছবি একসঙ্গে দিয়ে লেখা হয়, ‘খালেদা জিয়াকে জিতিয়ে দিতে চাইলে ডান পাশে লাইক করুন।’
ডিসমিসল্যাব ২০২৫ সালের ১৫ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত এই অনুসন্ধান চালায়। গবেষকেরা প্রতিটি বিজ্ঞাপন ও পেজের শেষ ২০টি পাবলিক পোস্ট বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করেন—এরা আগে রাজনৈতিক কোনো কনটেন্ট শেয়ার করেছে কিনা।
পাশাপাশি, ছয়জন পেজ অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়—কেন তারা এমন বিজ্ঞাপন চালিয়েছেন, আর তাদের কৌশল কী ছিল। পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে শুধুমাত্র যাদের তথ্য বিজ্ঞাপন থেকে আগেই পাওয়া গেছে।
এই গবেষণায় ফেসবুকের প্রচলিত নীতিমালা, বিজ্ঞাপন যাচাইয়ের মানদণ্ড এবং আগের বছরের গবেষণাগুলোর সঙ্গে তুলনা করে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।