সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ সারাদেশ অস্থির। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশের উত্তপ্ত সেই লাভা নেভানোর লক্ষ্যে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে সরকার? পরিস্থিতি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও দিনের একটি বড় অংশ সময় কারফিউ জারি রাখা হচ্ছে।
আপনি কি জানেন কারফিউ কাকে বলে? যদি আপনার মনে কারফিউ নিয়ে দোলাচল ও সংশয় থাকে তবে এই লেখা আপনার জন্যই।
কারফিউ এর অপর নাম হলো সান্ধ্য আইন। এই আইন কারফিউ নামেই বহুল পরিচিত। এর সজ্ঞা হচ্ছে, কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষ ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করাকে সান্ধ্য আইন বলে। সান্ধ্য অর্থ সন্ধ্যা। এই আইনের আক্ষরিক অর্থ হলো সন্ধ্যার সময় বা সন্ধ্যার পরে চলাচলের নিয়মকানুন।
সান্ধ্য থেকে কারফিউ শব্দ যেভাবে এলো? এবার জানাবো এর ইতিহাস।
আগেই বলা হয়েছে সান্ধ্য অর্থ সন্ধ্যা। মূলত কারফিউ একটি ইংরেজি শব্দ। ফরাসি শব্দ ক্যুভর-ফ্যু থেকে এই শব্দের উত্তপত্তি। ক্যুভর-ফ্যু অর্থ হচ্ছে অগ্নি নির্বাপন। মধ্যযুগে ক্যুভর-ফ্যু থেকে যখন কারফিউ শব্দটি ইংরেজি ভাষায় আসে, তখন সেটা ‘কারফ্যু’ নামে পরিচিত ছিল। পরে আধুনিক ইংরেজি শব্দ ভাণ্ডারে এটি কারফিউ নামে পরিচিত লাভ করেন।
এদিকে ক্যুভর-ফ্যু শব্দের অর্থ সংক্রান্ত একটি মতামত দিতে গিয়ে উইলিয়াম দি কনকরার উল্লেখ করেছেন, ‘কাঠের বাড়ি-ঘরে জ্বালানো অগ্নিশিখা ও আগুনের প্রদীপ থেকে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের জন্য রাত আটটার ঘণ্টা বাজার মধ্যেই সব অগ্নিশিখা ও আগুনের প্রদীপ নিভিয়ে ফেলার নিয়মই হচ্ছে ক্যুভর-ফ্যু।’
সান্ধ্য আইনের ব্যাখ্যা বা এর প্রকৃতিও জেনে রাখা আবশ্যক।
জনগণের প্রবেশাধিকার রয়েছে এমন কোনও স্থানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ৪ জনের বেশি মানুষকে একত্রে জমায়েত হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য সান্ধ্য আইন বা কারফিউ জারি করা হয়। সাধারণ কোনও জায়গায় দাঙ্গা বা জনরোষ যখন ভয়ংকর আকারে দেখা দেয় ও পুলিশ সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় তখন এই আইন জারি করা হয়। এ ক্ষেত্রে সমস্যার মাত্রার ওপর কারফিউয়ের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। কখনও অনির্দিষ্টকালের জন্যও জারি করা হয় কারফিউ।
এ ছাড়া এই আইন বলে, কোনও কোনও জায়গায় রাতে কারফিউ লাগে, কোনও জায়গায় দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য জারি করা হয়। কখনও কখনও অল্প সময়ের ব্যাবধানে কারফিউ প্রত্যাহার কিংবা শিথিল করা হয়, যাতে মানুষ নিজের হাট-বাজারে কেনাবেচা ও লেনদেন করে পারিবারিক জীবন সচল রাখতে পারে।
সান্ধ্য আইন জারি হলে নাগরিকদের কিছু আদেশ দেওয়া হয়। এবার জানাবো এই আদেশের বিস্তারিত।
যেহেতু ৪ জনের বেশি মানুষকে একত্রে জমায়েত হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য সান্ধ্য আইন বা কারফিউ জারি করা হয়। সেহেতু এই আইন জারি হলে সবাইকে বাড়ির ভেতরে থাকার আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। এর কারণ হলো, কেউ যেন ঘরের বাইরে জমায়েত হয়ে দল বেঁধে আবার কোনও অশান্তি করতে না পারে।
কারফিউ বা সান্ধ্য আইন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে অনেকেই জানেন না, বাংলাদেশে কীভাবে কারফিউ এসেছে। সেই সঙ্গে কে কারফিউ জারি করতে পারেন সেটা নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ‘৭৪’র ২৪ ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনার সরকারের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে আদেশ জারির মাধ্যমে নির্দেশ করতে পারেন যে, কোনও বিশেষ লিখিত অনুমতি ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। এই আইন লঙ্ঘনে ১ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান রয়েছে।