শুক্রবার (১২ জুলাই)। ঘড়িতে সকাল নয়টা। রাজধানীর নিউ মার্কেটে এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, দরজার বাইরে বেশ কয়েকজন ক্রেতা দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও তারা ভেতরে প্রবেশ করছেন না। অন্যদিকে আবার এদিন রাজধানীতে সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে।
একটু এগোতেই মার্কেটের দরজার সামনে গিয়ে দেখা গেল, পুরো মার্কেট কোমরসমান পানিতে ডুবে আছে। পানিতে ভাসছে নিচতলার বেশির ভাগ দোকানের পণ্য। আর সেসব পণ্য কুড়াচ্ছেন দোকান মালি ও কর্মচারীরা।
আলাপ হয় আব্দুর রহমান নামের এক জুতার ব্যবসায়ীর সঙ্গে। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি জানালেন, “মার্কেটের এই পরিস্থিতি নতুন নয়। টানা ১ ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই নিউ মার্কেটে এমন চিত্র দেখা যায়। রাস্তার আশের পাশের পানি মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আর এতে লোকসানের সম্মুখীন হন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।”
শুধু নিউ মার্কেটই নয়, এদিন নগরীর নীলক্ষেত, শান্তিনগর, কাকরাইল, ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও এদিন দেখা গেছে এমন জলাবদ্ধতার চিত্র। এমনকি জাতীয় সংসদের সামনের সড়ক মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের অর্ধেকটাই এদিন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত ছিল। অথচ গত ২০-৩০ বছর আগেও রাজধানীর চিত্র এমন ছিল না।
নগরবাসী বলছেন, বর্তমানে এক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেকেই। যদিও এমন পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞরা দোষারোপ করছেন, নগরীর বুকে অধিকাংশ জলাশয়, ক্যানেলগুলো জবর দখল ও অপরিকল্পিত নগরায়নে জলাশয় চাপা পড়ে যাওয়ার কারনে সৃষ্টি হচ্ছে এই সমস্যার। এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত সেই সঙ্গে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন অনুভব করেন তারা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) তথ্য বলছেন, ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরের কেন্দ্রিয় অঞ্চলে জলাশয়ের পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর ২০২৩ সালে জলশায়ের পরিমাণ এসে দাড়িয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থ্যাৎ গত ২৮ বছরে জলাশয়ের পরিমান কমেছে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিসংখ্যান বলছে, একই সময়ের ব্যবধান এই নগরীতে সবুজের পরিমাণ কমেছে ১৩ শতাংশ। ঢাকার সবুজের পরিমাণ বর্তমানে ৯ শতাংশ। এর আগে ১৯৯৫ সালে ছিল ১৩ শতাংশ।
রণি নামে একজন বলেন, “ঢাকায় যদি চলতি হয়, তবে একটি পরিবারের একটা গাড়ির পাশাপাশি নৌকা থাকা জরুরি। কারণ বৃষ্টির দিনে এই নৌকা ছাড়া চলাচল করা যাবে না। একটু টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। এর জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পদক্ষেপ কারও দেখি না।”
ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, “নিউ মার্কেটে ভারী বৃষ্টি হলেই তলায় যায়। এতে ক্ষতি হয়। কোথাও যেতে পারবো না। এখানে পরিবেশ একটা তৈরি হয়ে গেছে। এর জন্য আদৌ কেউ ব্যবস্থা নেবে কি না! সেটা আমরা জানি না।”
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “প্রতি বছর আমরা শুনি, ‘আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা থাকবে না।’ এতে আমরা আশান্বিত হই। আমরা দৃশ্যমান কিছু কাজও দেখি। কিন্তু এটার কোনও বাস্তবতা নেই। কারণ, ঢাকার ড্রেনের (নর্দমা) প্রাকৃতিক যে সংযোগটা ছিল তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এখন এমন কোনও জলাশয় ও সংযোগ ব্যবস্থা নেই যা ঢাকাকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে পারে। অনেক জলাশয় দখল হয়, সেসব রক্ষাও হয় এটা সত্য। কিন্তু কখনও শোনা যায় না যে জলাশয় দখলে কারও কারদণ্ড হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভিশন বা লক্ষ্য নিয়ে কাজগুলো যদি করা হয়। সবুজের পরিমাণ, জলাশয়ের পরিমাণ ও সংযোগ ব্যবস্থা যদি সঠিক থাকে, তবেই ঢাকা জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। নয়তো এটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।”