সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ০৯:৩৫ পিএম
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে কোন নির্বাচনে না যাবার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল বিএনপি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র পদসহ অন্যান্য পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন তৃণমূলে কোন কমিটি না থাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছে বিএনপির অনেক নেতা। এ অবস্থায় তাঁদের কোন দলীয় পদ না থাকায় বহিষ্কার বা শোকজের কবলেও পড়তে হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির সাবেক নেতা হিসেবে অনেকেই স্থানীয় সরকারের ভোটে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন। গত ১৬ জুন ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রমিজুর রহমান চৌধুরী অংশ নেন এবং জয়লাভ করেন। তবে কোন দলীয় পদ নেই বিধায় তাঁর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিএনপি।
দলের সাবেক নেতা কিংবা দলে যাঁদের পদ নেই তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কেনো— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, দলের কোনো নির্দিষ্ট পদে না থাকলে তো তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। যাঁরা দলে আছে তাঁদের বিরুদ্ধেই শুধু ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ওই নেতারা আরও জানান, বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দেশের ভোটিং সিস্টেমটাই নষ্ট করে ফেলেছে। তাঁদের অধীনে এ দেশে আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সব ধরণের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই এর আগে চরম প্রতিকূল অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সে নির্বাচনগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার যোগ্যতা রাখে না। ফলে এবার আর কোন নির্বাচনেই অংশ নেবে না বিএনপি। যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যায়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা আগেও নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ গত বছরের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এরপর আর জাতীয় সংসদের কোনো উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে তারা অংশ নেয়নি। গত বছরের মার্চে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
মামলার কারণে নিজ এলাকায় নেই অনেক স্থানীয় নেতা
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন কিংবা ইউপি নির্বাচন যাতেই বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন তাদের ভোটের মাঠে নতুন করে মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অনেককেই হতে হয় এলাকাছাড়া। তাই নির্বাচনে না যাওয়াই দলের উত্তম সিদ্ধান্ত।
দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, অতীতের ভোট পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যেন ধানের শীষের প্রতিপক্ষ। তাই আগামীতে সব নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দলের কেউ এই সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদ ছাড়া নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়
বেশ কয়েক বছর ধরেই তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির কমিটি দেওয়া হয়নি। এছাড়া ঘোষণার ৬ বছরেও এক নেতা এক পদ এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তাঁরা। যার ফলে অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও দলে কোন স্থায়ী পদ পায়নি অথবা পদ থাকলেও তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। যার ফলে তাঁরা পদহীন অবস্থায় সাবেক বিএনপি নেতা হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
পদহীন নেতারা নির্বাচনে দাঁড়ালে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে— এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, দলের যে বা যারা নির্বাচনে অংশ নিবে সেটা জানতে পারলে এর আগেও শোকজ ও বহিষ্কার করা হয়েছে। এবারও করা হবে। তবে যাদের পদ নাই তারা আসলে কী করবে সেটা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। সেটা সম্পর্কে আমার কোন মন্তব্য নাই।
তবে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এ দেশে নির্বাচনের নামে যা হয় সেটা এক প্রকার ভণ্ডামি। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আর না করা সমান কথা। নির্বাচনের পরিবেশ আর কোন দিন ফিরবে না, তাই এইসব কথা বলে লাভ নাই। নির্বাচনের সাথে যাঁরা সংশ্লিষ্ট তাঁদের দলনিরপেক্ষ হয়ে একটা সিস্টেমের আওতায় আসতে হবে। তারপরেই যদি ভালো কিছু হয়।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগীয়) মোস্তাক মিয়া বলেন, বিএনপি এই সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনে যাবে না। যারা এই সিদ্ধান্তের বাইরে গেছেন, তাঁদেরকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপি।
নির্বাচনের এজেন্ট হলেও হয় বহিষ্কার
দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে সদস্য পদসহ সব পদ থেকে গত ১৮ জানুয়ারি বহিষ্কার করে বিএনপি। এছাড়া সে সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকেও বহিষ্কার করা হয়। কারণ তিনি নির্বাচনে তৈমূর আলম খন্দকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করার পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কুকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।