আগস্ট ১৪, ২০২২, ০২:২০ এএম
বুয়েটে ছাত্রলীগের ব্যানারে কর্মসূচি করতে গিয়ে তোপের মুখে ছাত্রলীগের সাবেকরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে তড়িঘড়ি করে ছাত্রলীগের সাবেক ওই নেতারা কর্মসূচি শেষ করে বের হন। এ সময় বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
সাধারন ছাত্ররা অভিযোগ করেন, আবরার ফাহাদ হত্যার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ছাত্রলীগের ব্যানারে ওই কর্মসূচি আয়োজন করেন ছাত্রলীগের নেতারা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় বুয়েটের সেমিনার অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট এর সাবেক নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে ওই আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান হয়। সংগঠনটির সাবেক নেতারা দাবি করেন, অনুষ্ঠানটি দলীয় ছিল না। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের শাহাদত বরণের স্মরণেই অনুষ্ঠানটি হয়েছে।
এদিকে ওই খবরে বুয়েটের কয়েকশ শিক্ষার্থী মিলনায়তনের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। এরপর তড়িঘড়ি করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা কর্মসূচি শেষ করে বের হলে ‘খুনি’, ‘খুনি’ স্লোগান দিয়ে ‘প্রতিবাদ’ জানান শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না', ‘আবরারের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না', 'ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না'—এমন সব স্লোগান দেন। পরে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করতে গিয়ে উল্টো তোপের মুখে পড়েন; তখন তারা অনুষ্ঠানস্থল ছাড়েন।
এ সময় অনুষ্ঠানের সভাপতি বুয়েট ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাদের ভুল বুঝছে। আমরা মূলত বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করতে এখানে এসেছি। প্রাক্তন হিসেবে আমরা তো আসতেই পারি।”
তবে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী বুয়েটে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের নিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের প্রস্তাব করেন।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার পর শিক্ষার্থীরা সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এতে বলা হয়, শোকের মাস অগাস্ট। ১৯৭৫ সালের এ মাসের ১৫ তারিখ বাঙালি হারায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। “তার আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে গড়ে তুলতে। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ এবং সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করা সকল শিক্ষার্থীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম।
“অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যে-ই ছাত্র রাজনীতি একসময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিল, পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের, সেই ছাত্ররাজনীতি আজ ক্ষমতার অপব্যবহারে কলুষিত।”
২০১৯ সালের গত ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে ১১ অক্টোবর বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়।
সেই প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
“এহেন কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা, বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুস্পষ্ট জবাব আশা করছি।”
এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “ছাত্রলীগের ব্যানারে প্রোগ্রাম করার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। উনারা বলেছেন অ্যালামনাইয়ের ব্যানারে শোক দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান করবেন।”