সম্প্রতি পাচার হয়ে যাওয়া মা ও মেয়ের পাচারকারী রাফির তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ১৬ই আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর পল্লবী ও মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে পল্লবী থেকে মোঃ কালু, মোঃ সোহাগ ও মাদারীপুর থেকে মোঃ বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।
গত মে মাসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বাংলাদেশী এক তরুণীর পৈশাচিক নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে র্যাবের পক্ষ থেকে এই প্রচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযানে মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা রাফিসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।
অভিযানের ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ গতকাল মধ্যরাতে রাজধানীর পল্লবী এবং মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নারী পাচারকারী কালা-নাগিন চক্রের মূলহোতা মোঃ কালু (৪০) ও তার অন্যতম সহযোগী মোঃ সোহাগ (৩২) এবং তাদের সীমান্তবর্তী এজেন্ট মোঃ বিল্লাল হোসেন(৪১) কে গ্রেফতার করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকারীরা পাচার চক্রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে জানায় র্যাব।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নারী ও তরুণীদেরকে পাচার করত। তারা পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করত। চক্রের মূল হোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ কালু এবং গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহাগ তার অন্যতম সহযোগী। এছাড়াও দেশেও ২০-২৫ জন এই চক্রের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত বিল্লাল সীমান্তবর্তী এলাকার সম্বনয়ক। পাচার চক্রে নারী সদস্যও রয়েছে বলে জানা যায়। মূলতঃ যৌন বৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই ভিকটিমদের পাচার করা হত বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। চক্রটি ঢাকার মিরপুর, তেজগাঁও, গাজীপুরসহ বেশকয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
উল্লেখ্য গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় মায়ের অজ্ঞাতসরে তার ১৭ বছর বয়সী তরুণী কন্যাকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করা হয়। স্বাবলম্বী হতে চাওয়া উক্ত তরুণীকে পাচারকারীরা পার্শ্ববর্তী দেশে উচ্চ বেতনে বিউটি পার্লারে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে। ভুক্তভোগী মেয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তে পাচারকালীন সময়ে তার মাকে পাচারের বিষয়টি জানাতে সক্ষম হয়। অনন্যোপায় হয়ে মা একাই তার মেয়েকে উদ্ধার করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তখন মা পাচার চক্রের সাথে যোগাযোগ করে। চক্রটি একই প্রক্রিয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশে ভিকটিমের মাকেও পাচার করে। পরবর্তীতে, ঐ চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে মা কৌশলে পালিয়ে গিয়ে মেয়ের সন্ধান করতে থাকে। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী দেশের উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ায় একটি নিষিদ্ধ পল্লীতে তার মেয়ের সন্ধান পান। অতঃপর স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মা তার মেয়েকে উদ্ধার করে। মেয়েকে নিয়ে দেশে ফেরার সময় সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে বিএসএফের নিকট তারা আটক হয়। কিন্তু বিএসএফ সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদেরকে বিজিবির নিকট হস্তান্তর করে।