মহামারির অজুহাতে এক বছরের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। যার ফলে দেশেই তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জোর প্রদান করছে সরকার। বিকল্প উৎস হিসেবে কেনাফ পাট থেকে ভোজ্য তেল আহরণের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে পাটবীজ থেকে তেল উৎপাদনের জন্য পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাইলট প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।
আমদানি নির্ভর ভোজ্যতেল
বর্তমানে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ২২ লাখ ৯০ হাজার টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। যার বিপরীতে মাত্র ৫ লাখ টন ভোজ্যতেল দেশে উৎপাদন হয়। বাকিটা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। করোনা পরিস্থিতির কারনে দেশে বর্তমানে সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা, পাম ওয়েল ১২০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরিষা ১৮০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। মূলত সয়াবিন তেলের দানা আমদানি করে তেল উৎপাদন ও সরাসরি তেল আমদানি করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেলেই সয়াবিন,পামওয়েলসহ সরিষার দামও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
সম্ভাবনা থাকলে প্রক্রিয়া শুরু হয়নি
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (পরিকল্পনা প্রশিক্ষণ উইং) কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে উদ্ভাবিত পাটের জাতের সংখ্যা ৪৯টি। যার মধ্যে ২৪টি উন্নতজাত কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে কেনাফের ৪টি এবং মেস্তার ৩টি নিয়ে মোট ৭টি জাতের পাটবীজ থেকে ভোজ্যতেল আহরণ করা সম্ভব। এই জাতের পাটবীজে ১৫-২০ শতাংশ তেল বিদ্যমান, যেখানে সয়াবিন বীজে তেলের উপস্থিতি ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। তবে এই বিপুল পরিমাণ তেল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা থেকে তেল আহরণের কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি কোনো প্রতিষ্ঠান।
পাটবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ
গবেষকরা বলছেন, পাট বীজ থেকে তেল আহরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ উৎপাদন করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় হলেও বীজ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এ কারণে ফসলের বীজই ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না, তেল উৎপাদনের বীজ তো দূরের বিষয়।
প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদনের সম্ভাবনা কম
এস আলম ওয়েল রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাবুদ্দিন আলম বলেন, দেশে সয়াবিল তেল উৎপাদনের কারখানা দিয়েও লাভ করতে পারছে না অনেকে। এক্ষেত্রে নতুন ধরনের তেল ও তার বাজারজাত করণ নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তবে যদি যথাযথ সম্ভাবনা ও সরকারি সহায়তা থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসবে। তিনি দেশে সরিষা ও সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর প্রদান করতে বলেন।