কোম্পানি খুলেই প্রতারণা : ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৩, ২০২২, ০৩:৫০ পিএম

কোম্পানি খুলেই প্রতারণা : ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি

অনুমোদন ছাড়াই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নামে ব্যবসায় নেমেছে দুটি প্রতিষ্ঠান। এ জন্য রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি নামের এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই দুই কোম্পানির অন্যতম উদ্যোক্তা ও ম্যানেজিং পার্টনার রাশেক রহমান। গত মাসে এই প্রতিষ্ঠান দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা শুরু করে। ঢাকার পাশাপাশি রংপুর ও কুমিল্লায় অফিস নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। রংপুরের মুন্সীপাড়ায় নেওয়া হয়েছে বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানির অফিস। তারা স্বর্ণ ব্যবসার ঘোষণা দেয়।

বাংলাদেশের আইন অনুসারে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বিএসইসির অনুমতি নিয়েই শুধু এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান করা যায়। তাদের অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা শুরু করায় প্রতিষ্ঠান দুটিকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও জানানো হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ৮(৪) অনুযায়ী, সদস্যভুক্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো সিকিউরিটিজের জন্য ব্রোকার বা ডিলার হিসেবে কাজ করবে না। ফলে এ পরিস্থিতিতে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া বা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য না হয়েও কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান জানতে চায় কমিশন। এ চিঠি জারি করার সাত কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ১৬ মে এই চিঠি দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার রাশেক রহমান বলেন, ‘বিএসইসির অভিযোগ বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের আইন মেনে স্বর্ণ ব্যবসা করছি। অভিযোগ বোধগম্য হলে বিএসইসির চিঠির উত্তর দিতে পারি, না-ও দিতে পারি। ’ তিনি দাবি করেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান দুটির নামের সঙ্গে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শব্দটি থাকলেও তাঁরা এ জাতীয় কোনো ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত নন।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়, কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্ট সংক্রান্ত বিষয়ে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ২ (সিসিসি) অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জে নগদ বা অফসেট কমিশনের সঙ্গে যথাযথভাবে নিবন্ধিত। কমোডিটি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, বনজ, খনিজ বা এনার্জি এবং এই জাতীয় পণ্য থেকে তৈরি বা প্রক্রিয়াজাত দ্রব্য। এছাড়া কমিশন কর্তৃক সরকারি গেজেটের মাধ্যমে অবহিত করা যেকোনো পণ্য বা দ্রব্য হতে পারে। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ২(১)(৩) অনুসারে, কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্টকে নিরাপত্তা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে নিজের স্বর্ণ ব্যবসার শোরুম উদ্বোধন করেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। কোম্পানির চেয়ারম্যানও সাকিব আল হাসান। কিউরিয়াস লাইফ স্টাইলের সঙ্গে যৌথভাবে স্বর্ণ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন তিনি। জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকায় নিবন্ধিত রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও রংপুরে নিবন্ধিত বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি দুটির নামের সঙ্গে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ আছে। যদি কোনো কোম্পানি ‘ফিউচার কন্ট্রাক্টে’ পণ্য লেনদেনের ব্যবসায় যুক্ত থাকে তবে অবশ্যই তাকে বিএসইসির অনুমতি নিতে হবে। রিলায়েবল ও বোরাক ফিউচার কন্ট্রাক্টের অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা রাখে বিএসইসি। অন্য কেউ এই লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। ’

বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিকের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ অনুযায়ী এ ধরনের কোম্পানি স্বর্ণ ব্যবসায় যুক্ত হতে পারবে না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিএসইসি যথার্থ পদক্ষেপ নিয়েছে। যে যাই করুক লাইসেন্স তো নিতে হবে। না নিলে সেটা অবশ্যই অন্যায়। তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিএসইসি ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা তো দোকানদারি ব্যবসা না। এর পেছনে যেই থাকুক, ছাড় দেওয়া যাবে না। ’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিএসইসির অনুমতি ছাড়া কেউ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করলে তা বেআইনি বলে গণ্য হবে। বিএসইসি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ’

Link copied!