ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৪:২৯ এএম
সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের প্রভাবে পড়েছে টেকনাফে। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু ও আকিয়াব নদীবন্দরের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের প্রধান করিডোর টেকনাফ স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে দেশে আমদানি হয় কাঠ, সুপারি, মাছ, পেঁয়াজ, হলুদ, মরিচ, শুঁটকিসহ নানা পণ্য। এর বিপরীতে রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক, ওষুধ, প্রসাধনী, খাদ্যসামগ্রী ও প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন পণ্য।
কিন্তু মিয়ানমারের সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ব্যস্ত এই বন্দর এখন অনেকটাই স্থবির।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বছরে আদার চাহিদা ৪.৫ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ টনের কম। বাকি চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। আমদানির বেশিরভাগই আসে চীন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে।
এর মধ্যে আবার আমদানির সিংহভাগ আদাই আসে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমার থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ১১ মাসেই ৮০ হাজার ২১৮ টন আদা আমদানি হয়। একই সময়ে প্রায় ৬০০ টন রসুন আমদানি হয়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে সাধারণত আলু, খেলনা, প্লাস্টিক সামগ্রী, পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম, ওষুধ, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়।
তবে রপ্তানির পরিমাণ সামান্য। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ০.০৪ লাখ টন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ০.০৩ লাখ টন এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ০.১১ লাখ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এর বিপরীতে একই সময়ে যথাক্রমে ১.৯৮ লাখ টন, ০.৭৫ লাখ টন এবং ২.৩৩ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধ পথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়, চোরাচালানের মাধ্যমেও প্রায় সমপরিমাণ পণ্য দেশটি থেকে বাংলাদেশে ঢোকে।
গত নভেম্বর থেকে রাখাইনের বিভিন্ন শহরে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। এই লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ার কারণে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) অনেক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রোজা ও কোরবানির ঈদের আগে ভোগ্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ বাড়াতে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি জরুরি। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য বিশেষ করে প্লাস্টিক এবং নির্মাণসামগ্রীর অনেক চাহিদা রয়েছে সেখানে। সুতরাং আমার মনে হয় এটা ওভারকাম করা উচিত। সংঘাত থাকলেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।’