বিনা শুল্কের সুবিধা থাকছে না বাজেটে, বাড়বে খাদ্যের দাম

গোলাম রাব্বানী

মে ২১, ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম

বিনা শুল্কের সুবিধা থাকছে না বাজেটে, বাড়বে খাদ্যের দাম

খাদ্যমূল্য স্ফীতি এখন চরমে থাকার পরও আসন্ন ২০২৪-২৫ বাজেটে খাদ্যপণ্য, সার, গ্যাস ও কৃষি উপকরণসহ বিভিন্ন খাতের অন্তত ৩৩৫ পণ্যে ন্যূনতম ১ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা আসতে পারে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছে অর্থনীতিবিদরা। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়াতে তৎপর হবেন, যার প্রভাব সরাসরি পড়বে ভোক্তার ঘাড়ে।

আইএমএফের নির্দেশনা অনুসারে শুল্ক
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এখন কোনো শুল্ক নেই এমন আমদানি পণ্যের সংখ্যা ৩৩৫টি। এসব পণ্যে ক্ষেত্রবিশেষে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা উৎসে কর দিতে হলেও কোনো আমদানি শুল্ক দিতে হয় না। এসব পণ্য মূলত সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, শিল্পের প্রসার, রপ্তানি পণ্যের বাজার টেকসই করা, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এসব পণ্যে শুল্কহার শূন্য রাখা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, কোনো পণ্যেই শূন্য শুল্ক রাখা যাবে না। রাজস্ব বাড়াতেই হবে। এ জন্য সম্ভাব্য সব খাত থেকে কিছু না কিছু কর আহরণ করতে হবে। সংস্থাটির এই শর্ত মানতে গিয়ে আসছে বাজেটে প্রায় সব পণ্যেই ন্যূনতম ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআরের শুল্ক বিভাগ।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আইএমএফের শর্তে সব পণ্যে শূন্য শুল্ক তুলে নিতে হবে। অর্থাৎ ১ শতাংশ শুল্কও দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ওই পণ্যে বিদ্যমান অন্যান্য শুল্কহার কমিয়ে আমদানি শুল্ক আরোপ করলে হয়তো দামে ব্যালেন্স থাকতো। তবে আদৌ আইএমএফের শর্তে নাকি রাজস্ব আদায় বেশি করতে এই সিদ্ধান্ত সেটা রাজস্ব বোর্ডই ভালো জানে।”

যেসব পণ্যে বাড়ছে শুল্ক
এখন শূন্য শুল্ক আছে ও আসছে বাজেটে অন্তত ১ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে এমন পণ্যগুলোর মধ্যে আছে- চাল, গম, ভুট্টা, সরিষা বীজ, পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল, সানফ্লাওয়ার বীজ, তুলা বীজ, বিভিন্ন শাকসবজির বীজ, ক্রুড অয়েল, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিটুমিন, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, পেনিসিলিন, ইনসুলিন, কিডনি এরপর ডায়ালাইসিস মেশিন, পেসমেকার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক ওষুধ, ভ্যাকসিন ও ওষুধের কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের দরকারি রাসায়নিক, প্লাস্টিক কয়েল, পেপার বোর্ড, বিভিন্ন স্টিলজাতীয় পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, বিমান ও হেলিকপ্টার, বিভিন্ন ধরনের হাতঘড়িসহ আরও বহু দরকারি পণ্য।

নামমাত্র শুল্ক বসালে পণ্যের দামে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর)। রাজস্ব আয়ের স্বার্থে এসব পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে বড় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআরের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারি। তিনি বলেন, সাধারণত শূন্য শুল্কের পণ্যগুলো নানা কারণে অত্যাবশ্যক পণ্য হিসেবে বিবেচিত। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম শুল্কহারের সঙ্গে মিল রেখে ১ শতাংশ বাড়ালে খুব একটা দাম বাড়ার কথা না; কিন্তু তারা যদি এর অপব্যবহার করে এর চেয়ে বেশি মুনাফা করার চেষ্টা করে, তখনই হয়তো পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

ব্যবসায়ী নেতারাও চাইছে না বাড়তি শুল্ক
ব্যবসায়ী নেতারা অত্যাবশ্যক পণ্যের শুল্ক না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ করা বাড়ানোতে জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, “শুল্ক কম রেখে ভোক্তার চাপ কমাবে, নাকি শুল্ক বসিয়ে ভোক্তার থেকে বেশি রাজস্ব আয় করবে এটা এখন তাদের সিদ্ধান্ত। তবে অত্যাবশ্যক পণ্যের ওপর শূন্য শুল্ক তুলে দিয়ে যদি ১ শতাংশ শুল্কও বসানো হয়, তাতে জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, শুল্ক নয়, বরং নতুন করদাতা খুঁজে বের করে ব্যক্তিগত কর আদায় বাড়াতে হবে। সক্ষম অন্তত দুই কোটি ব্যবসায়ী রয়েছে, তাদের থেকে কর আদায় করা যায়। সেটা না করে সাধারণ জনগণের ওপর কেন চাপাচ্ছে, এটা বোধগম্য নয়।”

পণ্য আমদানিতে শূন্য শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি এমপিদের বিনা শুল্কে আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়িতেও শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এমপিরা এখন বিশেষ সুবিধায় বিনা শুল্কে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করে আসছেন। তাদের গাড়িতে শুল্কসহ অন্তত ৪০ শতাংশ কর বসানোর পরিকল্পনা আছে এনবিআরের। যদিও সাধারণ নাগরিকদের গাড়ি আমদানিতে সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ককর রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজেটে যদি সব পণ্যের শূন্য শুল্ক তুলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে এটি হবে শুল্ক খাতের একটি বড় সাহসী পদক্ষেপ। বাংলাদেশে তখন বিনা শুল্কে পণ্য আমদানির দিনের অবসান হবে।

Link copied!