করোনার আঘাতে নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। বেকার হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। কিন্তু গত অর্থবছরের বাজেটে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রান্তিক,দলিত ও সুবিধাবঞ্চিতদের ১ কোটি ২০ লাখ জনের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ থাকছে।
পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ থাকছে
আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছেন সড়ক ও নৌপরিবহণ শ্রমিকরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের গণপরিবহণ ও নৌপরিবহণ বন্ধ থাকায় এ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সড়ক ও নৌ খাতের ৩৫ লাখ পরিবহণ শ্রমিকদের নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সহায়তা পাওয়া শ্রমিকদের বাদ দিয়ে বাকি পরিবহণ শ্রমিকদের তালিকা জেলা প্রসকদের কাছে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হবে।
নতুন তালিকা ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা
চলতি বছর নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কমে আসবে। চলতি বছর ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা পাচ্ছেন এ ভাতা। নতুন বছরে সেটি আরও কমে আসবে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণ ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এই ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। সে আলোকে অর্থ ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
আরও ৯ হাজার হিজড়া, বেদে পাবে সুবিধা
নতুন বাজেটে হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ৮৬ হাজার জনকে এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে এ ভাতা দেওয়া হবে ৯৫ হাজার জনকে।
বৃদ্ধ ও বিধবা ভাতার পরিসর বাড়ছে
এবারই প্রথম দেশের ১৫০টি উপজেলার সব বয়স্ক মানুষ ও বিধবা নারীকে ভাতা দেওয়া হবে।বর্তমানে ১১২ উপজেলার প্রত্যেক বয়স্ক ব্যক্তিই ভাতা পাচ্ছেন। ওই হিসাবে আসন্ন বাজেটে বয়স্ক ভাতা পাবেন ৫৭ লাখ জন। বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে ৮৯ লাখ জনকে। ১৫০ উপজেলার সব বয়স্কজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় আরও ৮ লাখ সুবিধাভোগী যুক্ত হচ্ছেন নতুন করে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। চলতি বছর এ খাতে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ১৫০ উপজেলায় প্রত্যেক বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাকে ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে সুবিধাভোগী ২০ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ২৪ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়াবে। এজন্য বরাদ্দ থাকছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ আছে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
আগামী বছর আরও যারা কর্মসূচির আওতায় আসছেন, এর মধ্যে রয়েছে ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী। এছাড়া ৭ লাখ ৭০ হাজার দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, পৌনে তিন লাখ ল্যাকটেটিং মা। আরও ভাতা পাবেন মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
শিশুদের জন্য পৃথক কর্মসূচির দাবি
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বলয় বাড়াতে হবে। বিশেষ করে নগরের দরিদ্ররা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কারণ বাসস্থান, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা-এসব চাহিদা মেটাতে নগর দরিদ্রদের হিমশিম খেতে হয়। বস্তি এলাকার দরিদ্র পরিবার, বিশেষ করে শিশুদের এর আওতায় আনতে হবে। তাদের জন্যও পৃথক কর্মসূচি থাকা দরকার। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রণীত হয় শুধু দরিদ্রদের কথা মাথায় রেখে। অরক্ষিত মানুষের কথা বিবেচনা করা হয় না। মহামারির মতো দুর্যোগের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয় না।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় চলতি বাজেটে ১১২টি উপজেলার সব বয়স্ক ব্যক্তি এবং স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা নারীদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটে এটি ১৫০টি উপজেলার সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী এবং বয়স্কদের ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাও বাড়ানো হবে। এসব বিষয় নিয়ে এখন মন্ত্রণালয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে।