কোরবানির ঈদকে ঘিরে বেশির ভাগ পরিবারে মাংসের নানা পদের খাবার রান্না হয়। আর গরুর মাংস হলে তো কথাই নেই। ঈদের দিন তিনবেলা গরুর মাংস খেতে খেতে কখন যে সময় চলে যায়, টেরই পাওয়া যায় না।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, চর্বি বা ফ্যাট বেশি থাকায় আমাদের পরিমিত পরিমাণে গরুর মাংস খাওয়া উচিত। কেননা অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে বিভিন্ন রোগব্যাধি আমাদের শরীরে এসে ভর করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কী কী রোগ হতে পারে-
হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোলন ক্যান্সার
অতিরিক্ত গরু-খাসির মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়। এর থেকে পরবর্তীতে আরও অনেক রোগের আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসকরা জানান, ৪০ বছর বয়সের ওপরে চর্বিযুক্ত গরুর মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলন ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ার আশু সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের বেশির ভাগ সময় যারা গরু-খাসির মাংস খেয়ে থাকেন, তাদের ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
প্রবল হয় উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের আশঙ্কা
আমরা অনেকেই শুনেছি, গরু-খাসির মাংস অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা বলে থাকেন, নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর চর্বিযুক্ত গরুর মাংস না খাওয়াই শ্রেয়। কেননা গরুর মাংসে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এটা উচ্চরক্তচাপের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। গবেষকরা বলছ্নে, নিয়মিত লাল মাংস খেলে ধূমপান, মদ্যপানসহ বিভিন্ন বদঅভ্যাস গড়ে ওঠে। আর এগুলো ধীরে ধীরে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়।
বাড়ে কিডনি ও ক্যান্সারের ঝুঁকি
বেশি বেশি মাংস খাওয়া কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাও বেড়ে যায়। ৪০ বছর বয়সের বেশি লোকজন দিনের পর দিন গরুর চর্বি খেতে থাকলে থাকলে ফুসফুস, খাদ্যনালী, লিভার, মলাশয় ও অগ্নাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। যা আপনাকে মৃত্যুপথযাত্রী করে তুলতে পারে।
বাড়ে ডায়েবেটিস-হৃদরোগের আশঙ্কা
১০ লাখ লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বের করেছেন, নিয়মিত ৫০ গ্রাম বা এর চেয়ে অতিরিক্ত মাংস খেলে অন্যদের তুলনায় হৃদরোগ ও ডায়েবেটিসের (বহুমূত্র বা মধুমেয়) আশঙ্কা থাকে ৪২ শতাংশ। ৪০-৬০ বছর বয়সীদের এই কারণে অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া সমীচীন নয়। এতে তাদের হৃদরোগের আশঙ্কা ৩ গুণ থাকে।
বাড়তে পারে ওজন
অনেক সময় গরু মোটাতাজাকরণ ও রোগমুক্ত রাখতে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনাল ওষুধ সেবন করা হয়। মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে গুরুতর ক্ষতিসাধন করে থাকে। অল্প বয়সে অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে প্রজনন ক্ষমতা বা স্পার্ম (শূক্রাণু) সংখ্যা কমে যাওয়া, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়াসহ মেদ বৃদ্ধিজনিত ওজন বাড়তে পারে। চিকিৎসকরা বলে থাকেন, ছেলে-বুড়ো কারও পক্ষে অতিরিক্ত গরুর মাংস খেয়ে ওজন বাড়ানো দূরদর্শী ও বিবেচনাপ্রসূত নয়।