জুলাই ১৯, ২০২২, ০১:২২ পিএম
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার আস্থা ভোটে টিকে গেছে। অন্য দিকে, বরিস জনসনের উত্তরসূরি নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমপি) তৃতীয় রাউন্ডের ভোটেও সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচন এড়াতে গতকাল সোমবার আনা আস্থা ভোটে নিজেদের পক্ষেই রায় দেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা। ৩৪৯-২৩৮ ভোটে টিকে যায় বর্তমান সরকার।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক তৃতীয় রাউন্ডে সর্বেোচ্চ ভোট পেয়েছেন। আর দুই রাউন্ডে সবার থেকে এগিয়ে থাকলে তিনিই হবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত
বিরোধী দল লেবার পার্টি অবিলম্বে অন্তর্বর্তী নেতা নিয়োগের মাধ্যমে বরিসকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বরিস ইতিমধ্যেই সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন করতে যাচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টি।
বরিসকে দ্রুত সরাতে সরকার ও বরিস উভয়ের বিরুদ্ধেই অনাস্থা ভোট আনতে চেয়েছিল লেবার পার্টি। তবে সরকার বলছে, এটা অপ্রয়োজনীয়। কারণ, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরিবর্তে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা শুধু সরকারের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটের প্রস্তাব করে।
এদিকে, বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর শূন্য পদ পূরণে প্রথমে ১১ জন প্রার্থী থাকলেও এ মুহূর্তে প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন পাঁচ শীর্ষ টোরি নেতা। প্রথম ২ রাউন্ডের ভোটে ঋষি সুনক বিজয়ী হলেও বাজিকরদের কাছে এগিয়ে আছেন পেনি মরডান্ট। উত্তরে ঋষি সুনক লিজ ট্রাসের বিরুদ্ধে ‘সামথিং ফর নাথিং’ অর্থনীতির চর্চা করার অভিযোগ করেন। অন্যান্য আলোচিত বিষয়ের মধ্যে ছিল ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার, ব্রেক্সিট ও রাজনীতিতে আস্থার অভাব।
বরিসের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে আরও এগিয়ে গেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। সোমবার কনজারভেটিভ এমপিদের তৃতীয় রাউন্ডের ভোটাভুটিতে ব্যবধান আরও বাড়িয়েছেন তিনি। এ দফায় সুনাক ১১৫ ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে তিনি ১০১ ভোট পেয়েছিলেন। তবে বরিস নজনসনের চাওয়া, ট্রাস কিংবা মরড্যান্ট যাতে প্রধানমন্ত্রী হন। এমতাবস্থায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান হয়ে পড়েছেন।
সুনাকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মরড্যান্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ৮৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন নৌবাহিনীর রিজার্ভিস্ট মরড্যান্ট। জনসনের অনুগতদের পছন্দের প্রার্থী ট্রাস ৭১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে সুনাকের সঙ্গে এগিয়ে জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মরড্যান্ট। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক মন্ত্রী কেমি ব্যাডেনক ৫৮ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। এ রাউন্ডে সবচেয়ে কম ৩১ ভোট পাওয়ায় পার্লামেন্টের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারপারসন টম টুগেনহাট নেতৃত্বের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছেন।
টিকে থাকা বর্তমান চারজনের মধ্যে চতুর্থ রাউন্ডের ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। ওই ভোটাভুটিতে সবাই যদি ৩০ ভোটের বাধা উতরে যান, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী যিনি সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন তিনি বাদ পড়বেন। এভাবে ২১ জুলাই নাগাদ প্রার্থী দুজনে নেমে আসা পর্যন্ত সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া বাকি দুই প্রার্থী একে একে বাদ পড়বেন।
চূড়ান্ত দুই প্রার্থীর মধ্য থেকে টোরি দলের সব সদস্য (প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার) ডাকযোগে ভোট দিয়ে দল ও দেশের নেতাকে নির্বাচন করবেন। নতুন নেতার নাম ঘোষণা করা হবে ৫ সেপ্টেম্বর। ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হিসেবে তিনিই হবেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ছবি: সংগৃহীত
প্রসঙ্গত, গত রবিবার পাঁচ প্রার্থীর সর্বশেষ টেলিভিশন বিতর্কে তারা একে-অপরের কাজ ও নীতির সমালোচনায় মেতে ওঠেন। এক ঘণ্টাব্যাপী বিতর্কে সবচেয়ে প্রাণবন্ত বিতর্কে জড়ান ঋষি সুনক ও লিজ ট্রাস।
ঋষি সুনক ও লিজ ট্রাস কর নীতিমালা ও ব্রেক্সিট নিয়েও বিতর্কে জড়ান। আপাতদৃষ্টিতে ঋষি সুনকের সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল মনে হলেও, বাজিকরদের বাজির দরে বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মরডান্ট সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনি অল্প পরিসরে কর কমানোর সুপারিশ করেন এবং জানান, এই উদ্যোগে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। তিনি আরো জানান, মানুষের এখন জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে সহায়তা প্রয়োজন।