ভারত-কানাডা সম্পর্কে অবনতি যার কারণে; কে এই হরদীপ সিং?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ১২:৪০ এএম

ভারত-কানাডা সম্পর্কে অবনতি যার কারণে; কে এই হরদীপ সিং?

সংগৃহীত ছবি

একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে কানাডার সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হঠাৎই তলানিতে। কানাডার মাটিতে খুন হয়েছেন শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগ এই খুনের পেছনে ভারত সরকার জড়িত। আর এ নিয়েই দুই দেশের মধ্যে চলছে কূটনীতিকদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার।

প্রশ্ন হলো— কে এই হরদীপ সিং নিজ্জর, যাঁর হত্যাকাণ্ড ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কে এমন অবনতি?

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধরের ভার সিং পুরা গ্রামে জন্ম হরদীপ সিং নিজ্জর-এর। তিনি। ১৯৯৭ সালে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কানাডায় বসবাস করতে থাকেন। সেখানে মিস্ত্রির কাজ করতেন।

ভারতের অভিযোগ, হরদীপ সিং খালিস্তান আন্দোলনের একজন নেতা। আর ভারত খালিস্তান আন্দোলনকারীদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবেই দেখে। দিল্লির অভিযোগ খালিস্তান আন্দোলনকারীরা সংগঠন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত এবং কানাডা বরাবরই খালিস্তানিদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে আসছে ।

খালিস্তান টাইগার ফোর্স (কেটিএফ) নামে একটি সংগঠন রয়েছে। ভারত একে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ মনে করে। ভারতের অভিযোগ, হরদীপ সিং কেটিএফের মূল পরিকল্পনাকারী। এ ছাড়া ভারতে নিষিদ্ধ শিখ ফর জাস্টিস (এসএফজে) নামে আরেকটি সংগঠনের সঙ্গেও হরদীপ সিং যুক্ত ছিলেন বলে নয়াদিল্লির অভিযোগ।

হরদীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা ছিল। ২০০৭ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় বিস্ফোরণের ঘটনার মামলায় আসামি ছিল হরদীপ সিং । এতে ৬ জন নিহত হন, আহত হন ৪০ জন। ২০০৯ সালে পাতিয়ালায় রাষ্ট্রীয় শিখ সঙ্গতের প্রেসিডেন্ট রুলদা সিংয়ের হত্যায়ও হরদীপ সিং জড়িত ছিলেন। 

ভারতের জলন্ধরে এক হিন্দু পুরোহিতকে খুনের মামলায় পলাতক হরদীপ সিংকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনায় হরদীপ সিংয়ের সম্পৃক্ততারও অভিযোগ ওঠে।

২০২০ সালে ভারত সরকার হরদীপ সিংকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। দেশটির ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল তাঁর নাম। ভারতের পাঞ্জাবে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তানের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাতেন তিনি। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে শিখ নেতা ছিলেন হরদীপ সিংয়ের পরিচিতি ছিল।

গত ১৮ জুন কানাডার সুরি শহরে একটি গুরুদুয়ারার বাইরে খুন হন হরদীপ সিং। তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গতকাল সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে ট্রুডো বলেন, হরদীপ সিংকে খুনের পেছনে ভারতের হাত থাকার যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাঁর সরকারের কাছে রয়েছে। কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে কানাডার এক নাগরিককে এভাবে হত্যা করা, বিদেশিদের এমন প্রত্যক্ষ যোগসাজশে কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।

তবে ট্রুডোর এ অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত সরকার। 

সোমবার ভারতের এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে কানাডা। ভারতও মঙ্গলবার পাল্টা বহিষ্কার করে দিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার এক কূটনীতিককে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে এখন তলানিতে ঠেকেছে।

Link copied!