কোন দেশের ওপর কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১, ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম

কোন দেশের ওপর কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প?

ছবি: সংগৃহীত

গত ২ এপ্রিলকে ‘লিবারেশন ডে’ নামে অভিহিত করে বিভিন্ন দেশের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত বেশ কয়েকবার পাল্টিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ ৩১ জুলাই ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কয়েকটি দেশের জন্য শুল্কের হার গত কয়েক মাসে একাধিকার পরিবর্তনও করেছেন ট্রাম্প।

যেমন চীনের ওপর কয়েক দফায় শুল্ক বাড়ানো হয়, পরে তা আবার কমানোও হয়। তাদের আলোচনা চলছে এবং আগামী ১২ই অগাস্ট পর্যন্ত যা চলবে বলেও জানানো হয়েছে।

কানাডার ওপর শুল্ক বেশ কয়েকবার বাড়া-কমার পর অবশেষে তা বাড়িয়ে ঘোষণা করা হয়েছে।

মাত্র একদিন আগে ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসান ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের তালিকায় আবার তাদের নামের পাশে ১০ শতাংশ শুল্ক লেখা আছে। ফলে মূলত দেশটির শুল্কহার অনেক বেশি হারে বাড়তে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক গত কয়েক মাসে অন্তত দুই বার পাল্টানো হয়েছে।

এপ্রিলে প্রথমে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পর জুলাইতে তা কিছুটা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ আজ তা আরও কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর ছিল যেটা এখন আরও বাড়ছে।

কোন দেশের জন্য কী পরিমাণ শুল্ক

হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ট্রাম্পের নতুন শুল্কহার এরকম––

১০ শতাংশ: ব্রাজিল, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, যুক্তরাজ্য এবং নির্বাহী আদেশে তালিকাভুক্ত নয় এমন অন্যান্য সব দেশ

১৫ শতাংশ: আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, বলিভিয়া, বতসোয়ানা, ক্যামেরুন, চাদ, কোস্টারিকা, আইভরি কোস্ট, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, ইকুয়েডর, নিরক্ষীয় গিনি, ফিজি, ঘানা, গায়ানা, আইসল্যান্ড, ইসরায়েল, জাপান, জর্ডান, লেসোথো, লিচেনস্টাইন, মাদাগাস্কার, মালাউই, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, নাউরু, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, নরওয়ে, পাপুয়া নিউ গিনি, দক্ষিণ কোরিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, উগান্ডা, ভানুয়াতু, ভেনিজুয়েলা, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে

১৮ শতাংশ: নিকারাগুয়া

১৯ শতাংশ: কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন

২০ শতাংশ: বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম

২৫ শতাংশ: ব্রুনাই, ভারত, কাজাখস্তান, মলদোভা, তিউনিসিয়া

৩০ শতাংশ: আলজেরিয়া, বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা

৩৫ শতাংশ: ইরাক, সার্বিয়া

৩৯ শতাংশ: সুইজারল্যান্ড

৪০ শতাংশ: লাওস, মিয়ানমার

৪১ শতাংশ: সিরিয়া।

এর বাইরে কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম রয়েছে।

কানাডা ১ আগস্ট থেকে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে।

মেক্সিকোর ফেন্টানাইল ও গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ এবং ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও তামার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে–– যা ৯০ দিনের মধ্যে শুরু হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা পণ্য শূন্য থেকে প্রায় ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হচ্ছে। এই হার ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর করা শুরু হবে।

বাড়লো যেসব দেশের শুল্ক

ব্রাজিল প্রথমে ভেবেছিল যে তারা তুলনামূলকভাবে কম, ১০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের আওতায় পড়েছে। তবে আসলে তাদের শুল্কহার অনেক বেড়েছে।

গত বুধবারই ট্রাম্প ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম এই অর্থনীতির ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।

অন্যান্য দেশের মতো এই পদক্ষেপ বাণিজ্য সম্পর্কিত নয়, বরং এটি রাজনৈতিক।

জুলাইয়ের শুরুতে ট্রাম্প মিথ্যা দাবি করেছিলেন যে ব্রাজিলের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল, যখন তাদের প্রকৃতপক্ষে বহু মিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

ট্রাম্প তার মিত্র, সাবেক ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিচারের প্রতিশোধ হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করেছেন, যিনি গত নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর একটি কথিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযোগের মুখোমুখি।

তার সমর্থকরা সরকারি ভবনগুলোয় হামলা চালিয়েছিলেন এবং মামলায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি লুলা দা সিলভাকে ‘হত্যা’ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে। 

বলসোনারো অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ট্রাম্প বিষয়টিকে হয়রানিমূলক বলেই মনে করছেন।

হোয়াইট হাউজ ব্রাজিলে ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোর ক্ষতি করার পদক্ষেপ’ এবং ‘মার্কিন নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার অধিকার’ নিয়ে উদ্বেগও উল্লেখ করেছে।

এদিকে কানাডার ওপর শেষ মুহূর্তে শুল্ক বাড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ করেছেন ট্রাম্প।

তবে কানাডা থেকে আসা বেশিরভাগ পণ্য আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত উচ্চ হার এড়াতে পারবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডার মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে।

কানাডার বৃহত্তম ব্যাংক রয়্যাল ব্যাংক অফ কানাডার তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা প্রায় ৯০ শতাংশ কানাডিয়ান পণ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে অব্যাহতিপ্রাপ্ত, যার মধ্যে রয়েছে তাজা পণ্য, জ্বালানি রপ্তানি এবং অনেক শিল্প পণ্য রয়েছে।

তবে আলোচনা কোন দিকে মোড় নেয় তার ওপর নির্ভর করে দুগ্ধজাত পণ্য, কাঠ ও চামড়ার মতো কিছু পণ্য এখনো শুল্কের সম্মুখীন হতে পারে।

গত এপ্রিলে বিভিন্ন দেশের ওপর রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বাজেভাবে’ ব্যবহার করেছে এবং আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে যেটিকে তিনি ‘প্রতারণার’ সঙ্গে তুলনা করেন।

অন্যান্য দেশ অসম শুল্ক আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে বলে জানান তিনি।

তবে তার ঘোষণার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এসব শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারলে শুল্কহার কমানো হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর কেউ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরও বাড়বে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা ৯০ দিনে ৯০টি চুক্তির লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন। পরে এই সময়সীমা পহেলা অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এর মধ্যে চীন ও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দিলেও আলোচনায় অংশ নেওয়া দেশের সংখ্যাই বেশি ছিল।

যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছে।

এদিকে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য দেশের ভেতরে আইনি বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে ট্রাম্পকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিকারক পাঁচটি ক্ষুদ্র ব্যবসার পক্ষে মামলা দায়ের করেছিলো রাজনৈতিক সংস্থা লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার। ওই মামলা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত ‘লিবারেশন ডে’ ট্যারিফের বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের কোনো আইনি চ্যালেঞ্জ।

মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড রায় দেয়, যে জরুরি আইনের অজুহাত দেখিয়ে হোয়াইট হাউজ এই শুল্ক আরোপ করেছে, সেই আইন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একচেটিয়াভাবে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে শুল্ক বসানোর এখতিয়ার দেয় না।

তবে একদিন পরেই এই রায় বাতিল হয়ে যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আদায় আপাতত চালিয়ে যেতে পারবেন বলে রায় দেয় দেশটির এক ফেডারেল আপিল আদালত।

Link copied!