ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-সিএএ) কার্যকর করার কাজ আবারও পিছিয়ে গেছে। ২০১৯ সালের শেষে আইনটি ভারতীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর এ নিয়ে চারবার বিধি তৈরির কাজ পিছিয়ে গেল।
দ্য হিন্দু, আনন্দবাজারসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিধি তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়ের লোকসভা ও রাজ্যসভার দুটি সংসদীয় কমিটির কাছে চাওয়া বর্ধিত সময়সীমার শেষ দিন ছিল ৯ জানুয়ারি। এর জন্য মন্ত্রণালয় ওই কমিটি দুটির কাছে আরও সময় চেয়েছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। বিধিমালা ছাড়া ওই আইন কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
শেষ দিনেও বিধি তৈরি না হওয়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু শরণার্থী এবং নমশূদ্র সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মীয় গোষ্ঠী মতুয়াদের নাগরিকত্ব দিতে বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও অন্তত ছয় মাসের জন্য পিছিয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের মধ্য এবং উত্তর প্রান্তে বিরাটসংখ্যক নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, যাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে বিবাদ চলছে।
২০১৯ সালে পাস হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন—হিন্দু, শিখ, পার্সি, জৈন, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে যাঁরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা ‘বেআইনি অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন না।
কোনো আইন পাস হলে ছয় মাসের মধ্যে তা কার্যকর করার জন্য বিধি তৈরি করে লোকসভার কমিটি অন সাব-অর্ডিনেট লেজিসলেশনের কাছে নিয়ে যেতে হয়। কমিটি বিধি অনুমোদন করলে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগ ও রাজ্য সরকারকে আইন কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমিটিকে জানিয়েছে, ‘রুল ফ্রেমিং’-এর জন্য আরও সময় প্রয়োজন। ফলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের আগে ভারতে বাস্তবায়িত হচ্ছে না সিএএ।
আইনটিতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালের গোড়ার দিকে ভারতজুড়ে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পরে দিল্লিতে বড় ধরনের দাঙ্গাও হয়। দাঙ্গায় ৫০ জনের বেশি মারা যান। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।
এদিকে আইনটি কার্যকর করতে দেরি হওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছে পশ্চিমবঙ্গের নমশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন ও ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ সম্প্রদায়কে বলা হয়েছিল আইনটি কার্যকর করে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
এবারও আইনটি কার্যকর হওয়া পেছানোয় মতুয়া সম্প্রদায়ের সাংসদ ও বিধায়কেরা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অনেকে দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এখনো কেউ দল ছাড়েননি বলে দেশটির গণমাধ্যেমের খবরে বলা হয়।