ভারতে গরুকে জড়িয়ে ধরার সিদ্ধান্ত যে কারণে প্রত্যাহার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৫:৩৭ পিএম

ভারতে গরুকে জড়িয়ে ধরার সিদ্ধান্ত যে কারণে প্রত্যাহার

দেশ ও দেশের বাইরে প্রচণ্ড সমালোচনার ঝড়ে ‘ভালভাসা দিবসে গরুকে আলিঙ্গন করতে হবে- জড়িয়ে ধরতে হবে’ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

শুক্রবার রাতে প্রস্তাবটি তুলে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়,  লিখিতভাবে আগের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। তবে আবেদন প্রত্যাহারের পেছনে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পশুপালন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার সচিব বোর্ডের সচিব এস কে দত্ত এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধজাত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘গরু আলিঙ্গন দিবস’ উদযাপনের জন্য ভারতের পশু কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক জারি করা আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

গরুকে আলিঙ্গনের প্রস্তাব কেন ছিল?

ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ হিন্দু। ১৪ ভাগ মুসলিম এবং অন্য ছয় ভাগের মধ্যে খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অনুসারী রয়েছে। দেশটিতে হিন্দুদের কাছে গরু পরম পূজনীয়। গরুকে মায়ের মর্যাদা ও মায়ের মতোই গরুকে সম্মান করা হয়। এছাড়া অনেক রাজ্যে গরু জবাই করা নিষিদ্ধ। 

হিন্দুদের মধ্যে যারা গরুকে পবিত্র বলে পূজা করেন তারা বলছেন, পশ্চিমা ঐহিত্য উদযাপন ভারতীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায়। এরই ধারাবাহিকতায়

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতি-ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠী ভ্যালেন্টাইনস ডে তে শহরের দোকানগুলোতে অভিযান চালিয়ে কার্ড ও উপহার পুড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়,  রেস্তোরাঁ ও পার্ক থেকে হাত ধরা দম্পতিদের বের করে দিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, দিনটি অশ্লীলতা প্রচার করে। এর পরিবর্তে  এই দিনে মা গরুকে জড়িয়ে ধরা উত্তম।

ক্ষসতাসীন বিজেপি সরকারের অন্যতম শরীক দল শিবসেনা এবং বজরং দলের মতো গোষ্ঠীগুলো বলছে যে, গরুকে জড়িয়ে ধরার কাজ হিন্দু পরিচয় পুনরুদ্ধার করার পথ প্রশস্ত করবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ভালবাসা দিবসে গরুকে আলিঙ্গ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির মেরুদন্ড হল গরু। আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে, জীবনধারণে ও গ্ৰামীণ অর্থনীতির বিকাশে গরুর ভূমিকা অপরিসীম। কামধেনু যেমন একদিকে মানুষকে ধনসম্পদে ধনী করে তোলে, গোমাতার প্রকৃতি হল আমাদের লালনপালন করা।

বিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, পশ্চিমী সংস্কৃতির আগ্ৰাসনে আমাদের বৈদিক সভ্যতা দিন দিন বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। পশ্চিমী সভ্যতার চাকচিক্য আমাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে প্রায় ভুলিয়ে দিচ্ছে বলা যায়। গরুর থেকে অশেষ উপকার পাওয়া যায়। তাই গরুকে জড়িয়ে ধরলে শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা সমাজই সুখী হবে। সমৃদ্ধ হবে আবেগ।’

‘তাই, গোমাতার উপকারের কথা মাথায় রেখে সমস্ত গরুপ্রেমীদের অনুরোধ করা হচ্ছে, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইনস ডে-এর পাশাপাশি কাউ হাগ ডে হিসেবে পালন করা হোক।

কেন প্রত্যাহ্যার করা হলো

কেন্দ্রের এই আদেশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশ ও দেশের বাইরে। হাসির খোরাক হয়ে যায় বিষয়টি।  গরুকে আলিঙ্গন করা নিয়ে বিজেপি সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করে বিরোধীরা। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় সরকারের এ আহ্বানকে “একদম পাগল এবং যুক্তিহীন” বলে উল্লেখ করেন।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘গরুকে আলিঙ্গন করতে হবে এই যুক্তি কার মাথা থেকে এলো? তাকে খুঁজে বের করে মানুষের সামনে ছেড়ে দেয়া দরকার। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে- যখন তারা আলিঙ্গন করতে গেছেন, তখনই ‘মা’ তাদের গুঁতো দিয়েছে। যাইহোক এতদিনে সুবুদ্ধি হলো ওদের।’ এসব  কারণে ভালবাসা দিবসে গরুকে জড়িয়ে ধরার আদেশ প্রত্যাহার করে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন।

Link copied!