স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী শারভীন সুলতানা মীমের মরদেহ (২৬) গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নিহত শারভীন সুলতানা মীম (২৬) মেহেরপুরের সালদা থানার গাংনী উপজেলার আজিজুল ইসলামের মেয়ে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
সোমবার (২৫ মার্চ) পাবনা শহরের মনসুরাবাদ আবাসিক এলাকার ৫ নাম্বার রোডের গ ব্লকের একটি ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাড়ির মালিক জানান, দুই মাস আগে ওই শিক্ষার্থীর স্বামী এই বাসা ভাড়া নেন। তারা সেখানে সব সময় থাকতেন না। তার স্বামী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গত রাতে নিহতের স্বামী বাসায় ছিলেন না, তিনি ঢাকায় ছিলেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার স্বামী ঢাকা থেকে ফিরে ওই ফ্ল্যাটে যান। ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ। দরজা ধাক্কাধাক্কির পরেও না খুললে সবার সন্দেহ হয়। পরে পুলিশকে ফোন দিলে দরজা ভাঙলে নিহত ওই শিক্ষার্থীকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নিহতের স্বামীর নাম আসিফ মোর্শেদ (২৬) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব এখলাসপুরের আবদুল মালেকের ছেলে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেছেন তিনি। ৫ মাস আগে তারা ভালোবেসে একে অপরকে বিয়ে করেন।
আসিফ মোর্শেদ জানান, রোববার (২৪ মার্চ) বিকেল চারটার সময় মিমের সঙ্গে তার কথা হয়। এরপর তার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল। সেহেরির সময় ফোন দিলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা থেকে রওনা হন তিনি। বাসায় এসে বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে ফ্ল্যাটে গেলে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ দেখেন। এরপর পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসে।
নিহতের সহপাঠীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের ৪০৯ নাম্বার রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী। বিয়ের পর থেকে তিনি কখনও হলে থাকতেন কখনও স্বামীর সঙ্গে মনসুরাবাদে থাকতেন। বিয়ের পর কারও সঙ্গে তেমন কিছু শেয়ার করতেন না। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় তারা অবাক হয়েছেন। এ ঘটনা ‘আত্মহত্যা’ নাকি ‘অন্য কিছু’ প্রশাসনকে সেটি তদন্ত করে বের করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সকাল ১১টার দিকে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। তখন দেখি পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস চলে এসেছে। এরপর দরজা ভাঙলে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে আমরা জানতে পারি যে তার স্বামীর সঙ্গে কয়েকদিন ধরে ঝগড়াবিবাদ চলছিল। এ কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, `আমরা খবর পেয়ে পুলিশ পাঠাই। সেখানে পুলিশ গিয়ে ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থা পাওয়া যায়। মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে আত্মহত্যা করেছেন তিনি৷’