কী কারণে আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩, ০১:৪৬ এএম

কী কারণে আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা!

সংগৃহীত ছবি

পড়াশোনায় খারাপ ফলাফল, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অ্যাকাডেমিক চাপ কিংবা পারিবারিক বা সামাজিক চাপ- নানান কারণে আত্মহত্যা করছেন তরুণ থেকে বয়-বৃদ্ধরা। সারা দেশে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এর মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। 

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান: কোন পথে সমাধান?’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়। এসব তথ্য প্রকাশ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের হার ক্রমবর্ধমান। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০১ এবং ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৩২। এরই ধারাবাহিকতায় এই বছর দেশের ১০৫টি জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহকৃত তথ্য অনুসারে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই আট মাসে ৩৬১ জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

সমীক্ষা মতে, গত আট মাসে গড়ে প্রায় ৪৫.১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যেখানে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩০ জন। ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ছিল ১৪৭ জন। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থী ছিল ২১৪ জন।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি
চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যা করেছে ৩১.৩০ শতাংশ। খুলনায় ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৪.১০ শতাংশ, রংপুরে ৮.৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১০ শতাংশ, রাজশাহীতে ১১.৯০ শতাংশ ও বরিশালে আত্মহত্যা করেছে ৮.৩০ শতাংশ। এ ছাড়া সিলেটে আত্মহত্যা করেছে ২.৫ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও বেড়ে উঠার সহায়ক পরিবেশ না থাকায় এখানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে।

শিক্ষার্থীরাই বেশি ঝুঁকছেন
আত্মহত্যাকারীদের বয়সভিত্তিক বিবেচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা। ৬৭.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিল এই বয়সী। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিল ১৫৯ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী ৮৪ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২১.৬ শতাংশ। ২৬ থেকে ৩০ বছরের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২.৮০ শতাংশ। ১ থেকে ১২ বছরের শিক্ষার্থী ছিল ৮.৩০ শতাংশ।

আত্মহননের নেপথ্যে কী?
আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক দল আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখেছেন, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পিছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ৩১.৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৫৭ জন এবং সমসংখ্যক পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া আত্মহত্যা করার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে, যেমন- প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অ্যাকাডেমিক চাপ, মানসিক অস্থিতিশীলতা, পারিবারিক সমস্যা ও অন্যান্য।

ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার কারণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা কম থাকবে বলেই ধারণা ছিল। কিন্তু সেখানেও দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। গত আট মাসে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৩৬১ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩০ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহনন করেছেন। এদের মাঝে ৫৩.৩০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী ছিল।

Link copied!