দীর্ঘদিন ধরে কলা, পালং শাক, আঙুর কিংবা সয়া সসের মতো খাবারকে আমরা স্বাস্থ্যকর হিসেবেই দেখে আসছি। পরিবার ও বিজ্ঞাপনের প্রভাবেও এসব খাবার নিয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন— নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা বা ওষুধ সেবনের কারণে এসব পরিচিত খাবারই কিডনি ও হৃৎপিণ্ডের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের অবস্থা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়। কিডনি বা হৃদপিণ্ড দুর্বল হলে অথবা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের সময় খাদ্যের লবণ, পটাসিয়াম ও বিপাক প্রক্রিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। ফলে সাধারণভাবে ‘নিরাপদ’ মনে হওয়া খাবারও অনেক সময় অজান্তে ক্ষতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
কলা
সাধারণভাবে শক্তিবর্ধক ফল হিসেবে পরিচিত কলায় পটাসিয়ামের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। কিডনি দুর্বল হলে শরীর এই অতিরিক্ত পটাসিয়াম বের করতে পারে না, যা হৃদ্যন্ত্রের জন্য বিপদজনক হতে পারে। বিশেষ করে যেসব রোগী পটাসিয়াম ধরে রাখে এমন ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের জন্য বেশি কলা খাওয়া ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আঙুর
স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে পরিচিত আঙুরে এমন উপাদান থাকে যা লিভারের ওষুধ ভাঙার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। লিভার প্রতিস্থাপিত রোগীদের জন্য এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ— কারণ আঙুর খেলে কিছু ওষুধের ঘনত্ব হঠাৎ বেড়ে গিয়ে শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব ফলের প্রভাব এক রকম নয়।
পালং শাক
ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ পালং শাকেও রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন কে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। যাদের হৃদ্যন্ত্রে কৃত্রিম ভালভ আছে বা রক্ত জমাট রোধে ওষুধ খেতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে পালং শাক খাওয়া সতর্কতার দাবি রাখে।
সয়া সস
খাবারের স্বাদ বাড়াতে বহুল ব্যবহৃত সয়া সসে থাকে অত্যধিক সোডিয়াম। এটি শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে, রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদ্যন্ত্র ও কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। যারা দীর্ঘদিন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবন করেন বা হৃদ্যন্ত্র দুর্বল, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
এখানে উল্লেখিত খাবারগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ক্ষতিকর নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি এগুলো নির্দ্বিধায় খেতে পারেন। তবে কিডনি বা হৃদ্যন্ত্র দুর্বল হলে, কিংবা নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের সময় খাদ্যাভ্যাসে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত পটাসিয়াম, লবণ বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে অজান্তেই ঝুঁকি বাড়তে পারে।