অনাড়ম্বর আয়োজনে নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ; কেমন যাবে ভবিষ্যতের পথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৪, ২০২৩, ০৯:১৩ পিএম

অনাড়ম্বর আয়োজনে নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ; কেমন যাবে ভবিষ্যতের পথ

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ নিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এর আগে সকাল ১০টায় কালো মুজিব কোট ও সাদা পাঞ্জাবি পরা নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করেন।

সে সময় একটি সামরিক ব্যান্ড আনুষ্ঠানিক সংগীত পরিবেশন করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় রাষ্ট্রীয় এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং শতাধিক বিশিষ্ট অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অফিসের দায়িত্ব পরিবর্তনের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ নিজ আসন বদল করেন।

পরে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ নথিতে স্বাক্ষর করেন। শপথ গ্রহণের পর অতিথিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি।

আজ রাতেই নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে উঠছেন মো. সাহাবুদ্দিন। শুরু হচ্ছে মো. সাহাবুদ্দিনের পাঁচ বছরের বঙ্গভবন-জীবনের যাত্রা।

মো. সাহাবুদ্দিন নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিলেন যে সময় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় ভূমিকায় আছে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁকে ভূমিকা পালন করতে হবে এবং তাঁর ভূমিকা সহনশীল পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করবে বলে প্রত্যাশা করছে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন মো. সাহাবুদ্দিন। এদিকে বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে এখন পর্যন্ত অভিনন্দন জানানো হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু এই সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে, ফলে সরকার কাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করল, এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে সেই দলের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া রাষ্ট্রপতি অন্য দলগুলোর মন জয় করতে পারবেন কি না সেটা নির্ভর করবে তাঁর কার্যক্রমের ওপরই। 

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে সেই দলের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন অন্য দলগুলোর আস্থা কীভাবে অর্জন করবেন—-এই প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব। আমি আমার জীবনের ২৭ বছর সিনিয়র জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই দায়িত্ব একেবারে নিরপেক্ষভাবে পালন করেছি। কখনো কারও প্রতি পক্ষপাত করেছি বা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি—এ ধরনের কোনো অভিযোগের সম্মুখীন কখনো হয়নি।’

মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমি সবার সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করব। সংবিধানে যে দায়িত্ব দেওয়া আছে, তা আমি যথাযথভাবে পালন করব।’

৭৩ বছর বয়সী নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শরফুদ্দিন আনছারী, মা খায়রুন্নেসা।

রাষ্ট্রপতি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।

মো. সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তাঁর অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে।

কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পরপর দুইবার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদক কমিশনার হিসেবে তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন।

সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হলেন।

রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা, ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের সদস্যরা এবং বিদায়ী রাষ্ট্রপতি হামিদের পরিবারের সদস্যরা, তাঁর স্ত্রী রাশিদা খানম ও ছেলে সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার, সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের, জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, প্রতিমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন বা ইনস্টিটিউটের প্রধান, জাতীয় রাজনৈতিক নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ ১ হাজার ১০০ জনের বেশি আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!