কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থীর পরিবারে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩, ১০:০৯ পিএম

কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থীর পরিবারে শোকের মাতম

কানাডার টরন্টোয় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান, অ্যাঞ্জেলা বারৈ ও আরিয়ান আলম দীপ্তর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কানাডার স্থানীয় সময় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে টরোন্টোর ৪২৭ সাউথবাউন্ড হাইওয়ে ডানডাস এক্সিটে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এরইমধ্যে ওই শিক্ষার্থীদের মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

বৃহস্পতিবার শাহরিয়ার খানের বাবা শরীফ খান গণমাধ্যমকে বলেন, 'মরদেহ দেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র প্রস্তুতের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। বিমানের একটি ফ্লাইটে আগামী রবিবার তাদের মরদেহ দেশে আনার সম্ভাবনা আছে।'

canada-3

দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসে টরন্টো পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

ওই দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার। তিনিই মূলত গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানাচ্ছেন। তবে এখনো শঙ্কা কাটেনি। চিকিৎসকের বরাতে কুমার বিশ্বজিৎ এই তথ্য জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজন কণ্ঠশিল্পী কিশোরকে।

কিশোর বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ায় নিবিড় গতকালকের চেয়ে এই মূহুর্তে ভালো আছে। নিবিড়ের কাকা অভিজিৎ দা এবং ওর বাবা কুমার বিশ্বজিৎ স্যারের সাথে কথা হয়েছে। তবে এখনও শঙ্কামুক্ত নন। আগামী ৬ ঘন্টার ভেতর নিবিড়ের সার্জারী হওয়ার কথা রয়েছে। 

Canada Accident car

দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত

কানাডার এসটি মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে নিবিড়ের। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তার একটি অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। নিবিড়ের একাধিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

দুর্ঘটনায় নিবিড়ের মাথার একটি বড় অংশ এবং চোখের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার বুকের পাঁজরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শরীরের আর কোথায় কোথায় আঘাত আছে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

Canada Accident Kumar

ছেলে নিবিড় ও স্ত্রীর সাথে কুমার বিশ্বজিৎ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

দুর্ঘটনার বিষয়ে টরন্টো পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে কুমার নিবিড় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গাড়িটি খুব দ্রুতগতিতে চলছিল। গাড়ির চালক এক হাইওয়ে থেকে আরেক হাইওয়েতে উঠার সময় টার্ন নিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সেখানে একটু কার্ভ ছিল। হাইওয়ের রেলিংয়ে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি ৩ বার উল্টে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে আগুন ধরে যায়।

পুলিশ আরও জানায়, দুর্ঘটনার পর গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ফায়ার ব্রিগেড স্বল্প সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থলে না পৌঁছালে তাদের বডিও পাওয়া যেত না। পুরো ছাই হয়ে যেত। এদিকে ছেলের দুর্ঘটনার খবর শুনে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকেই কানাডার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন কুমার বিশ্বজিৎ ও তার স্ত্রী নাইমা সুলতানা।

নিহত দীপ্ত বাংলাদেশ ছেড়ে গিয়ে টরন্টোর নর্থ ইয়র্কে বন্ধুদের সাথে উঠেছিলেন। সম্প্রতি বন্ধুদের ছেড়ে নতুন জায়গায় চলে আসেন তিনি। কারণ, তিনি নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সবে এক মাস সেখানে ক্লাস করেছিলেন। এর মধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি ছিল আরিয়ানের জন্মদিন। বন্ধুরা নর্থ ইয়র্ক থেকে আরিয়ানের নতুন আবাসস্থল ইতোবিকোকে এসেছিল জন্মদিন পালন করতে। জন্মদিনের দুই দিন পর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন সড়কেই শেষ হয় আরিয়ানের। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপারা এখন আরিয়ানের বাবা এটিএম আলমগীর ও মা রেজিনা সুলতানা। 

 

Link copied!