পদ্মা সেতু: চালুর এক মাসেই ৮০ কোটির বেশি টাকা টোল আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ২৫, ২০২২, ০৫:১১ পিএম

পদ্মা সেতু: চালুর এক মাসেই ৮০ কোটির বেশি টাকা টোল আদায়

বাংলাদেশের জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর এক মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু উদ্বোধনের পরদিনই থেকে এপর্যন্ত ৮০ কোটি ৩৯ লাখ ৩ হাজার ৪৭০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। এই সেতু দিয়ে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে এসময়ে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬২টি যানবাহন পার হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি সূত্র এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।

মাওয়া টোল প্লাজায় দায়িত্বে থাকা পদ্মা সেতুর সাইট অফিস নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সেতু চালু হওয়ার পর দিন ২৭ জুন টোল আদায় হয় ২ কোটি ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৯৫০ টাকা। তবে গত ৮ জুলাই সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। ওইদিন গাড়ি পারাপার হয়েছে ৩১ হাজার ৭২৩টি। অন্যদিকে, সেতু চালুর এক মাস সময়ে সবচেয়ে কম টোল আদায় হয়েছে গত ১০ জুলাই ঈদুল আজহার দিন। ওইদিন ১১ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন পারাপারে  মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা টোল আদায় হয়।

পাল্টে গেছে দৃশ্যপট

গত রমজানের ঈদেও শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের অসহনীয় বিড়ম্বনা ছিল। এবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বিড়ম্বনাহীন মানুষ ঈদ আনন্দ উদযাপনে বাড়ি  গেছে। ঘরমুখো যাত্রীদের মধ্যে ছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। আগে যেখানে ঢাকা থেকে খুলনা যেতে ৮-৯ ঘন্টা লেগে যেতো পদ্মা সেতু দিয়ে এখন মাত্র ৪ ঘন্টায় গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পেরেছে।অন্যান্য জেলার মানুষেরও একই কথা- সময় অনেক কম লাগায় তারা খুব আনন্দিত।  তবে বাসের শৃঙ্খলা, ভাড়া বৃদ্ধিরোধ ও স্টপেজ নির্দিষ্ট করার দাবি জানান তারা।

পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিপিসি’র ট্যুর অপারেশন

পদ্মা বহুমুখী সেতুকে ঘিরে মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই।এ কারণে আগ্রহী দর্শনার্থীদের জন্য ছুটির দিনে বিশেষ ট্যুরের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ  পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি)। গত ২২ জুলাই শুক্রবার ৯৯৯ টাকায় পদ্মা সেতু দেখার বিশেষ এ ট্যুরের উদ্বোধন করা হয়।

সাড়ে ৯ বছরেই উঠে আসবে খরচের টাকা

সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে দেড় শতাংশ পর্যন্ত। শুধু এই প্রাপ্তি হিসাবে নিলেই মাত্র ৯ মাসে পদ্মা সেতুতে ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ যোগ হবে অর্থনীতিতে। তা ছাড়া সেতুতে প্রতিদিন যে টোল আদায় হবে, শুধু সেটা হিসাব করলে সাড়ে ৯ বছরে সরাসরি উঠে আসবে সেতুর নির্মাণব্যয়।

বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সেতুতে ওঠা উৎসুক জনতাকে বুঝিয়ে নামিয়ে দেন পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই বিশাল বিনিয়োগের প্রাপ্তি হিসাবের দুটি উপায় আছে। একটি হলো জিডিপি’র বাড়তি প্রাপ্তি বিবেচনা, অন্যটি সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্দিষ্ট হারে টোল আদায়ের মাধ্যমে সরাসরি খরচ উঠিয়ে আনা।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই সেতু দিয়ে দেশের ২৩ জেলায় প্রতিদিন ২১ হাজার ৩০০ যানবাহন চলাচল করবে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৬০০। এদের সবার থেকে টোল বাবদ যে আয় হবে, শুধু তা দিয়ে সেতুর ব্যয় উঠে আসতে সময় লাগবে সাড়ে ৯ বছর।

দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু, মোটর সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চালুর প্রথম দিনেই অন্যান্য যানবাহনের মতো মোটরসাইকেলে চড়ে অনেকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছে। তবে  ওইদিন সেতুর ২৬ ও ২৭ নম্বর পিলারের মাঝখানে চলন্ত মোটরসাইকেলে ভিডিও করার সময় দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়। মৃতরা হলেন-মো. আলমগীর হোসেন (২২) ও মো. ফজলু (২১)।

তাঁরা ঢাকার দোহার–নবাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার কারণে পদ্মা সেতুতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সেতৃ কর্তৃপক্ষ।

ডিসেম্বরে বসছে ক্যামেরা

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি শনাক্ত করতে পদ্মা সেতুতে বসছে সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হলে সেতু মনিটরিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির নম্বর প্লেট, আইডেন্টিফিকেশন, গাড়িটি কত কিলোমিটার বেগে যাচ্ছে সবকিছুই সংরক্ষণ করা যাবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ।

সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “!মনিটরিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির নম্বর প্লেট, আইডেন্টিফিকেশন, গাড়িটি কত কিলোমিটারে চলছে সবকিছুই রেকর্ড হবে। কাজটি নকশা পর্যায়ে আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে।” ক্যামেরা বসানো হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত কবেন।  

টোল আদায়ে এখনও ধীরগতি

পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে বেশ ধীরগতি রয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তবে সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, খুব শিঘ্রই এই সমস্যা দূর হয়ে য়াবে। টোল আদায়ের ধীরগতি সম্পর্কে সেতু কতৃ‌র্পক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, “ধীরগতি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে আসছে। সামনে দ্রুত সময়ের মধ্যে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তখন পদ্মা সেতুর দুই পারে যানজট আর হবে না বলে তিনি জানান।

Link copied!