যেখানে মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৬, ২০২১, ০৪:০৬ এএম

যেখানে মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে

দেশে প্রায়ই শোনা যায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এলেই সহিংসতার খবর মেলে। কিন্তু ব্যতিক্রম নারায়ণগঞ্জের সাবদি বাজার এলাকা। ব্রম্মপুত্র নদী বিধৌত এ বাজারটির প্রাণকেন্দ্রে পাশাপাশি অবস্থান করছে সাবদি রক্ষাকালী মন্দির এবং সাবদি বাজার মসজিদ

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ এবং শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ক থাকার কারণে এখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি কোনো কালে। এমনকি নামাজের আযান এবং পূজার ঘন্টা বা উলুধ্বণির সময় এক সময়ে পড়ে গেলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছান দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন। ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে হামলার কোন প্রভাবের ছিটেফোটাও সেখানে দেখা যায়নি।

সাবদি বাজারে অবস্থিত শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দিরে ১০ বছর ধরে পুরোহিতের দায়িত্বে আছেন প্রদীপ চক্রবর্তী। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে প্রদীপ চক্রবর্তী জানান, এই মন্দিরে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন দেশ-বিদেশ থেকে। আমাদের পাশে একটা মসজিদও রয়েছে। আমরা দুই সম্প্রদায়ে মিলেমিশে চলি। আমরা আমাদের ধর্ম পালন করি, তারা তাদের ধর্ম পালন করেন। আমাদের মাঝে কোন সমস্যা হয় না কখনো। 

                     শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দিরের পুরোহিত প্রদীপ চক্রবর্তী। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সাবদি বাজারের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা সুনিল হালদার (৭৫)। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, আমরা সকল সম্প্রদায় মিলে মিশে থাকি। কোন সমস্যার কথা শুনলে আলোচনা করে সেটির সমাধান করে ফেলি। 

সাবদি এলাকায় জন্ম আমির হোসেনের (৩৬)। পেশায় ভ্যান চালক। তিনি নিজের এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলতে গিয়ে জানান, বাবরি মসজিদ হাঙ্গামার সময়ই আমাদের এখানে কোন ঝামেলা হয়নি। স্বাধীনতার পর থাইক্যা এইখানে হিন্দু মুসলমান একসাথে আছি। এইখানে আগে কোন ঘাট ছিল না। আমরা হিন্দু মুসলমান একসাথে এখানে গোসল করি। আমাদের মাঝে কোন ঝামেলা নাই। ইনশাআল্লাহ আর কোনদিন হইবোও না। 

সাবদি বাজার মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে ২৫ বছর ধরে দায়িত্বে আছেন মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল (৫৬)। আমাদের এইখানে হিন্দু-মুসলিম একসাথে চলা ফেরা করি। এইখানে কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয় না। আর হবেও না।  

সারাদেশের কোথাও না কোথায় যখন ধর্মীয় সহিংসার আগুন, সেখানে সাবদি বাজার এলাকায় এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কীভাবে সম্ভব হচ্ছে— এমন প্রশ্নে মাওলানা আব্দুল আওয়াল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, আমাদের এই এলাকার লোকজন খুবই সহজ-সরল। তারা নির্ভেজাল মানুষ। আর এই এলাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থকও সবাই কম-বেশি আছে। এ কারণে সবাই আন্তরিকভাবে, মানে ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে কোন ঝামেলাও হয় না। যার যার ধর্ম সে পালন করে, এটা নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি বা কোন ভেদাভেদ আমাদের মাঝে নেই। 

  সাবদি বাজার মসজিদের ইমাম ও  সাবদি রক্ষাকালী মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এলাকার স্থানীয় ডাক্তার মনোরঞ্জন বাড়ৈ মন্টু। তিনি সাবদি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন। স্থানীয়দের কাছে তিনি মন্টু কাকা হিসেবেও পরিচিত। মনোরঞ্জন বাড়ৈ দল-মত নির্বিশেষে সবার আপন মানুষ। ২০০১ সালে এই মন্দির পুনঃসংস্কারসহ ১৯৪৭ সালের পর সাবদিতে ১৯৯৬ সালে এই এলাকায় প্রথম পূজা চালু কার্যক্রমের সাথে তার নাম উঠে আসে৷ মন্দির মসজিদ পাশাপাশি থাকার কারণে কোন সমস্যা হয় কিনা, জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, আমরা এখানে সবাই মিলে একসাথে থাকি। এখানে বসবাসকারী হিন্দু মুসলমান সবাই খুব আন্তরিক। আমরা একই সাথে পূজা এবং আযান পরলে আমরা দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন আলোচনা করে আগে-পরে করে নিই। পূজা উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন আমাদের আনন্দের ভাগিদার হন।

অতীতের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় কোন সমস্যায় পড়েছিলেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের সহিংসতার কোন প্রভাব এখানে পড়ে নাই। আমরা জানতেই পারি নাই। এর আগেও কোন সমস্যা ছিল না। তবে সংখ্যালঘু হিসেবে একটা দুশ্চিন্তাতো থাকেই সবসময়। 

নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবদি গ্রাম বিখ্যাত ফুলের গ্রাম হিসেবে। এছাড়া এখানেই নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের জাতীয় তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্ধ।

Link copied!