পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান বলা হয় ‘এরিয়া ৫১’ কে। যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গোপনীয় স্থান। ধারণা করা হয়, এখানে প্রায়ই থাকে এলিয়েনদের আনাগোনা।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে ও লাস ভেগাস থেকে ১৩৫ কিলোমিটার উত্তরে গ্রুম হ্রদের ধারে রয়েছে এরিয়া ৫১ স্থানটি। এই রহস্যময় এলাকাটি প্রায় ৩০ লাখ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে। মূলত এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই স্থানটির সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এর ভেতরে কী কাজ হয়, তা খুবই সতর্কতার সঙ্গে গোপন রাখা হয়। এলাকাটির বাইরে চারদিকে সব সময় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড, সিসি ক্যামেরা ও সশস্ত্র পাহারাদার থাকে। যেন কেউ এই স্থানটিতে প্রবেশ করতে না পারে। এরিয়া ৫১-এর ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ চালানোও নিষিদ্ধ।
মার্কিন বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানা যায়, এটি মার্কিন বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র। আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ চলার পাশাপাশি এখানে নিত্যনতুন ড্রোন বানিয়ে পরীক্ষার কাজ চলে। তাই এরিয়া ৫১-তে কারো প্রবেশের সুযোগ নেই।
১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের সময় ‘এরিয়া ৫১’ নির্মাণ করা হয়। তবে স্থানটির কথা কোনোভাবেই জনসম্মুখে আনতে চাননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) এই স্থানটির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথম জনসম্মুখে নিয়ে আসে এই স্থানটিকে।
২০১৩ সালে জনসম্মুখে এই স্থানটিকে আনা হলেও স্থানটি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সাল থেকেই। রোসোয়েল বিমান দুর্ঘটনার পর অনেকের ধারণা ছিল এই স্থানটিতে প্লেন নয়, উড়েছিল স্পেসশিপ। ভেতরে ছিল মানুষের মতো প্রাণী এলিয়েনের অস্তিত্ব।
স্থানটি নিয়ে যে দ্বিতীয় বিতর্ক রয়েছে তা হলো বিজ্ঞানীরা চাঁদে মানুষকে পাঠাতে ব্যর্থ হয়ে এরিয়া ৫১কে চাঁদে যাওয়ার পুরো দৃশ্যটি মানুষের সামনে নাটক করে। ১৯৬৯ সালে চাঁদে নীল আর্মস্ট্রং-এর পা রাখার ছবি এই এরিয়া ৫১ থেকে তোলা হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন সে সময়ের অনেক বিশেষজ্ঞরাই।
এ ছাড়া এই স্থানটি সম্পর্কে যে অভিযোগ রয়েছে তা হলো ১৯৫৫ সালে যুদ্ধবিমান পরীক্ষামূলক ওড়ানো শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানের আকাশে প্রায়ই ইউএফও বা স্পেসশিপের অস্তিত্ব দেখতে শুরু করে অনেকেই। কারণ হিসেবে একাধিক বিমানচালক বলেন, ওই সময়ে বিমান ওড়ার উচ্চতার চেয়ে ঢের বেশি উচ্চতায় কিছু উড়তে দেখা যায়, যা ইউএফও ছাড়া অন্যকিছু নয়। এ বিষয়ে তাদের পক্ষে মার্কিন সেনাবাহিনী কোনো জোরালো তথ্য দিতে পারেনি। ১৯৫০ সালের শেষ ভাগেই গোপনীয় ‘ইউ-২’ প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলেও এরিয়া ৫১-কে কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয়েছে আজও।