নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে জাতীয় সংগীত গেয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।
এসময় সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রিয়াঙ্কা গোপ স্মারকলিপি পাঠ করেন। বক্তব্য দেন নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক লাবণী বন্যা, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক কামাল চৌধুরীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এবং হল সংসদের সংস্কৃতি সম্পাদকরা সংহতি জানান। সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সংগীত বিভাগের শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন বলেন, “সভ্যতা টিকে আছে শিল্প, সাহিত্য আর সংস্কৃতির ওপর ভর করে। প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত শিক্ষক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “একটা শিশু যেন পূর্ণ মানুষ হয়ে বড় হতে পারে—তার জন্য সংগীত, সংস্কৃতি ও শরীরচর্চা অপরিহার্য।”
সংগীতশিল্পী শায়ান বলেন, “আগে আমরা প্রতিবাদের গান গাইতাম, এখন গান গাওয়াটাই এক ধরনের প্রতিবাদ। কিছু মানুষ সংগীত আর ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। এই ফাঁদে না পা দিয়ে গান দিয়েই তাদের জবাব দিন।”
ডাকসুর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হেমা চাকমা বলেন, “গণমাধ্যমে দেখেছি, কিছু গোষ্ঠীর চাপে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি জাতীয় সংগীতকেও কেউ কেউ অবমাননা করেছেন, যা লজ্জাজনক।”
থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্ম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ঈস্রাফিল শাহীন বলেন, “যে সিদ্ধান্তে সংগীত বাদ দেওয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। শুধু ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্রের বিকাশ সম্ভব নয়; সংস্কৃতি কখনোই ধর্মের বিরুদ্ধে যায় না।”
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের সংস্কৃতি সম্পাদক হুমায়রা উপন্যাস বলেন, “নীতিনির্ধারকরা সংগীতকে কেবল বিনোদন মনে করেন, অথচ এটি অধ্যয়নের বিষয়। সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা প্রয়োজন একটি শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য।”
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫’-এ সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ২ নভেম্বর প্রকাশিত সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে দুটি পদ বাদ দেওয়া হয়।
এর আগে ধর্মভিত্তিক কিছু সংগঠন ও রাজনৈতিক দল এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সংগীত শিক্ষকের বদলে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবি তোলে। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, সীমিত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগে কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে না এবং বৈষম্য তৈরি হবে—এ কারণেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।