জনতা বা জনগণ আসলে কে বা কারা। কাকে জনতা বলে, জনতা বলতে কি বোঝায়, কাদের বোঝায়। জনতার প্রতিনিধি কে, জনতা আসলে কার। কেন তাদের জনতা বলা হয়। জনতা কি চায়, কি পায়, আর কি খায়। তাদের পরিচয়, চরিত্র, চেহারা, বা আচরণই কেমন। এগুলো খুবই মৌলিক প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর কি সহজ, কিংবা আদৌ কি কোনো উত্তর আছে?
এসব নিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনে, টক শো, পেপার পত্রিকায় নানা ধরনের আলাপ আলোচনা হয়। মাঝে মাঝরে তর্ক বিতর্কের ঝড় ওঠে। কিন্তু কোনো প্রশ্নের উত্তর কি মেলে। জনতা বা জনগণ সর্বত্র, জনগণ সবার, কিন্তু কেউ তাদের নয়।
সবারই দল আছে, জনতার দল নেই। সে সবার, সব দলের। জনতাদের কেউ কেউ দল করে, কিন্তু দল তার জন্য কি করে। যখন সে বিপদে পড়ে, সংকট যখন তার ঘাড়ের কাছে ঘোরে, তখন সে বুঝতে পারে আসলে কেউ কারু নয়। সে দলের জন্য, কিন্তু দল তার জন্য নয়। সে অসহায়, একা, দলহীন,গোত্রহীন, অর্থহীন।
জনতার কোনো জোট নেই। কারণ তারা জোটবদ্ধ হতে জানে না। তারা দলাদলি করতে পারে না, পছন্দও করে না। নিতান্তই আটপৌড়ে। এ কারণেই সে জনতা। যখন এক জন মানুষ বাসে চড়ে তখন সে জনতা (Powerless. Ordinary) আর বাসের ড্রাইভার আর সহকারী বা কন্ডাকটর হচ্ছে ক্ষমতাবান।
আবার সেই ড্রাইভার যখন পুলিশের সামনে দাঁড়ায় সে হয়ে যায় জনতা আর পুলিশ হচ্ছে ক্ষমতাবান। পুলিশ অবশ্য কখনই হয়তো জনতা হয় না, সব সময়ই ক্ষমতাবান। সেই যাত্রী আবার যখন রিক্সায় চড়ে তখন সে বিশেষ আর রিক্সাওয়ালা হচ্ছে জনতা। রিক্সাওয়ালাদের আবার বিশেষ হবার সূযোগ তেমন একটা নেই। খেটে খাওয়া মানুষ সব সময়ই জনতা।
বাড়িওয়ালা ক্ষমতাবান আর ভাড়াটিয়া জনতা। দোকানদার, হকার, ফেরীওলা, মুটে, মজুর, সুতার, মিসতিরি, এরা সব সময়ই জনতা। যার কিছু নেই সেই জনতা। আর যার কিছু না কিছু আছে, তিনি জনতা থেকে আলাদা, বিশেষ কেউ। জনতা গহন অন্ধকারে পড়ে থাকে। সব সময় সাইড লাইন। তাদের আকাঙখা কখনোই পূরণ হয় না। জনতার নাম করে অনেক কিছুই করা হয় কিন্তু জনতার জাত বদলায় না।
সব সময়ই সঙ্গীহীন, পথহারা, অসহায়। “সবার পিছে সবার নীচে।“ (“যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন, সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে, সবার পিছে, সবার নীচে, সব-হারাদের মাঝে“ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।) জনতাকে চেনার জন্য এর চেয়ে ভাল উদাহহরণ আর হতে পারে না।
ধুকে ধুকে যারা বেঁচে থাকে তারাই হচ্ছে জনতা। আরা বিলাসিতার চাপে যারা পিষ্ট তারা বিশেষ। জনতা যখন রাস্তার ধারে পড়ে থাকে, বাসে ওঠার জন্য ধাক্কা ধাক্কি করে, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে পড়ে থাকে, তখন তার দিকে ফিরে তাকাবার মতও কেউ থাকে না।
বাজার করার টাকা থাকে না, মাঝে মাঝে বাড়িভাড়া দিতে পারে না। দোকানে বাকি পড়ে থাকে। তবু এরা আছে, কায় ক্লেশে বেঁচে তো আছে। কেন বেঁচে আছে জানে নাম আবার অজানা ভয়ে মরতেও পারে না।মেয়ের পরীক্ষার ফিস দিতে পারে না, বাবার ওষুধ কে নার টাকা থাকে না। বন্ধু স্বজনরা এড়িয়ে চলে। পাছে টাকা ধার চায়। এরাই জনতা। এদের চিনিয়ে দিতে হয় না। দেখলেই চেনা যায়। আর এ কারণেই কেউ এদের চিনতে চায় না।
যারা সস্তা পোষাক পরে, স্যান্ডেল পরার সূযোগও পায় না, তারাই কি জনতা। যারা লোকাল বাসে চড়ে, বাসের ভাড়া না বাচিয়ে ফেলতে পারলে মনে মনে নিজেকে সাবাসি দেয়। কদাচিত রিক্সায় ওঠার সূযোগ পায় তারা জনতা, নাকি কৃষক শ্রমিক মজুর মুটে ওরা।
পোশাকে দিয়ে কি জনতাকে আলাদা করা যায়। দামী পোষাক, অঢেল ক্ষমতা, নাকি শুধু টাকা দিয়েই জনতা থেকে আলাদা হওয়া যায়। টাকা আর ক্ষমতাই কি সব। নাকি পোষাক আষাক, জাত গরিমা। কিছু থাক বা না থাক জনতা যে সংখ্যায় অনেক বেশী তারাই যে সংখ্যাগড়িষ্ঠ, সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
অনেক পেশার মধ্যেও সাধারণ জনতা আছে আবার কুলীন বা বিশেষও হয়ে ওঠা সম্প্রদায়ও আছে। পেশা যাই হোক কেখানেও কেউ কেউ সাধারণ আবার অনেকে বিশেষ। আম জনতা হওয়া হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই সহজ, কিন্তু সচেতনে সাধারণ হয়ে ওঠা খুব সহজ কাজ নয়।
জন সমক্ষে জনতার কথা বলার সূযোগ খুব একটা মেলে না। চায়ের আড্ডায় নিজেরা নিজেরা কথা বলা ছাড়া অন্য কোথাও কথা বলার সূযোগ তাদের হয় না। ঘরে, বাইরে, আলোচনা সভায় বা বিতর্কে। এরা কথা বলতে চাইলে সবাই বলে ফালতু প্যাচাল। তাদের কথা কেউ শোনে না। শুনলেও সেই কথা কাজে লাগে না। শুধুই কথার কথা। জনগণ শুধু বোঝা বয়েই বেড়ায়, এক সময় নিজেরাও বোঝায় পরিণত হয়।
এদেশে সত্য বলা বড় কঠিন। এ কারণে জনতা শুধু শুনেই যায়। কিছু বলে না। জনসভায় বক্তৃতা শোনে, টিভিতে টক শো শোনে, বসের গালি শোনে, বউয়ের ঝারি শোনে। শুধু শুনেই যায় কখনো প্রতিবাদ করে না। যদিওবা কখনো ফুৎ করে জ্বলে ওঠে আবার হুট করেই হারিয়ে যায়।
মানসিকতার একটা ব্যাপারও আছে এই ধরনের কম পড়া শোনা জানা, অর্থ না থাকা মানুষ ক্ষমতা পেলেও জনতা অবস্থান থেকে বেড় হতে পারে না, বিশেষ শ্রেণিতে উঠতে পারে না। কারণ এরা মন, মানসিকতা, স্বভাব চরিত্র, আচার আচরণ সব দিক থেকেই জনতা।
তারপরও জনগণ বা জনতা বহুল উচ্চারিত, জনপ্রিয় একটা শব্দ। যদিও অপমানজনক। দয়া, দান দক্ষিণা, অনুকম্পা নিয়ে যাকে বাঁচতে হয় হয়তো তিনিই জনতা। এই দেশে জনগণ হচ্ছে অবহেলিত, অবমানিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত মানুষের প্রতিবিম্ব বা প্রতিনিধি।
রাজনৈতিক দল বা নেতারা কথায় কথায় বলেন জনগণই সব ক্ষমতার উৎস, জনগণই সব। জনগণ তার পক্ষেই আছেন জনতা তার লোক আর তিনি একান্তই জনগণের। কিন্তু কারা এই জনগণ তারা আসলে কার লোক তারা কোনো পক্ষে যেতে চান কিনা, তারা আসলে কি চান এসব প্রশ্ন কেউ করেনও না জানেনও না, জানতে চানও না। কিংবা কিভাবে জনগণই সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেটাও বলে না।
সব রাজনৈতিক দলই দাবী করে জনতা তাদের পক্ষে আছে। জনতা তাদের। জনতার ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাতেই তারা রাজনীতি করেন। জনতার কল্যাণই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। পুরোনা দল তো আছেই নতুন দলগুলোও মনে করে জনতা তাদের পক্ষেই আছে, তাদেরই সমর্থন দিচ্ছে এবং দিয়ে যাবে। সব দলই বলে জনগণ সবচাইতে শক্তিশালী। জনগণ চাইলেই সব কিছু করতে পারে। জনগণ ক্ষমতায় বসাতেও পারে আবার ফেলেও দিতে পারে। আসলেই কি জনগণ কিছু করতে পারে।
যখন রাজনৈতিক ডামাডোল চলে, যখন ভোট আসে, তখন এই জনতা হঠাৎ করেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মূল্যবান বা মহা মূল্যবান হয়ে ওঠে। সবাই তাদের পাশে জনগণকে চায়, কাছে টানতে চায়। নিজেদের লোক বলে প্রমাণ করতে চায়। আবার প্রয়োজন এবং ভোট ফুরিয়ে গেলে আবার যা সেই।
ভোট চলে গেলে কেউ আর তাদের চেনে না ডাকেও না। শুধু বকতৃতা দেয়ার সময় বলে, আমি ওদের আর ওরা আমাদেরই লোক। তখন নেতার পান্ডারাই এসে লোভ দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে দলে ডেকে নিয়ে যায়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
পাচ বছর পর একবার ভোট দেয়ার সূযোগ আসলে জনগণের ক্ষমতা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত করে, কতটা নিশ্চিত করে। শুধু ভোট আসলে জনতাকে ক্ষমতা ভোগ করার কতটুকু সূযোগ করে দেয়। একবার ভোট দেবার পর আবার বছরের পর বছর ধরে আপমান, বঞ্চনা, অবহেলা। জনতা আবার সেই আম জনতা। তারপরও এই ভোট দেবার সূযোগটাকেও সাধারণ মানুষ অনেক বড় করে দেখে। কারণ এ ছাড়া তাদের আর তেমন কোনো প্রাপ্তি নেই। আর সেই ভোট দেয়ার অধিকারটাও যখন হারিয়ে ফেলে তখন তো আরো অসহায়।
বেশীর ভাগ জনতা মনে করে ফায়দা লোটার জন্যই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কথা বলে, তাদের ব্যবহার করে। শুধু ভোটের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে টিকে থাকার জন্যই তাদেরকে প্রয়োজন হয়। অভিমানে কখনো কখনো দূরে থাকলেও নেতা ডাকলে আবার এরা চলে আসে। নেতার কথায় শ্লোগনে দেয়া, মিছিল করে, লড়াই করে, আবার পড়ে পড়ে মারও খায়। অনেক সময় মরেও যায়। মরলেই বা কি আসে যায়। কেউ এদের মনে রাখে না। কারণ এরা তো জনতা। জনতা কি জঞ্জাল, নাকি হঠাৎ জ্বলে ওঠার অচেনা মশাল।
যে কোনো দল তাদের ইচ্ছা, আকাঙ্খা অভিলাস জনতার ইচ্ছা আশা বলে চালিয়ে দেয়। জনগণ চাইছে আমরা ক্ষমতায় যাই, ক্ষমতায় আছি বা থাকি। জনগণ চাইছে এটা করতে, ওটা নিষিদ্ধ করতে। জনগণের জন্যই আমরা রাস্তা দখল করি জনগণের জন্যই টাকা সংগ্রহ করি।
কিন্তু নিজে কখনো জনতা হতে চান না। যখন কোনো ব্যক্তি আর জনতার কাতারে থাকেন না, মানে জাতে উঠে যান, তখন তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচেন। সবাই হতে চান প্রভাবশালী, প্রতিপত্তিশালী, অর্থবান, ক্ষমতাবান। হতে চান বিশেষ কেউ। হতে চান বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব। ভিআইপি। গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি। জনতা হচ্ছে যাতনার।
অপমান, অপদস্ত হওয়া জনতার নিয়তি। পদে পদে তাই বঞ্চনা ছাড়া আর কিছু কি পায়। তারা হা পিত্তেশ করেই মরবে। আর কিছু লোক এদের ব্যবহার করে বিশেষ হয়েই ধাকবে। জনতা একটা বৈশম্যমূলক শব্দ। এ কারণেই সবাই বিশেষ হতে চান, ভিআইপি হতে চান, জনগণ থেকে আলাদা কেউ হতে চান। সবাই জনগণকে পাশে চান, পাশে বসাতে চান না।
সবাই চান অনেকে তাকে চিনবে, কথা বলবে, তার কথা শুনবে। তার দয়া দাক্ষিণ্য অনুকম্পা প্রত্যাশা করবে। তার কাছে আসবে তার কথায় চলবে, উঠবে বসবে। এসব কারণ মাথায় রেখেই অনেকে রাজনীতি করতে আসেন। এই ধরনের একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য রাজনীতি হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সিড়ি।
বিশেষে ব্যক্তি হবার জন্য বা সাধারণের থেকে আলাদা হবার জন্য পুলিশ, প্রশাসন, নামকরা ব্যবসায়ী, অনেক টাকার মালিক, বাহিনীর কর্মকর্তা, এমনকি আইনজীবী বা সাংবাদিকও হতে পারেন। পেশা যাই হোক তার প্রভাব প্রতিপত্তি, অর্থ বিত্ত বৈভব অর্থাৎ ক্ষমতা থাকতে হবে। সেই ক্ষমতা উপভোগের উপযুক্ত পরিবেশও থাকতে হবে। ভিআইপি বা বিশেষ কেউ হতে চাওয়া অপরাধ নয়, কিন্তু এতে যদি সমাজে বৈশম্যের সৃষ্টি হয় সেটা শংকা তৈরী করে। তবে এর পরিবর্তণ বা সংস্কার খুবই কঠিন।
বিশেষ হলে আরেকটা বড় সুবিধা নিয়ম ভাঙ্গলেও কিছু হয় না, অপরাধ করলেও আইন তাকে ছুতে পারে না। বিশেষ হবার কারণে বা বিশেষ ব্যবস্থার কারণে রং-সাইড বা রাস্তার উল্টা দিক দিয়েও চলা যায়। গাড়ি ঘোড়া আর জনগণকে থামিয়ে রেখে বিশেষ লেনে চলে যাওয়া যায়। সব জায়গাতেই সুবিধা, লাইন দিতে হয় না। বরং ব্যবস্থাই লাইন তৈরী করে দেয়।
এসব ক্ষেত্রে জনতার কি কিছু করার আছে, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া, মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া। কিছু বলতে গেলে উল্টো অপমানিত হতে হয় বা মার খেতে হয়। এই জনতা হয় সহ্য করবে অথবা নিজে বিশেষ বা ভিআইপি হবাার চেষ্টা করবে। কিন্তু যাদের মধ্যে একবার জনতা মেন্টালিটি ঢুকে যায়, তাদের পক্ষে বিশেষ, অভিজাত বা ভিআইপি হয়ে ওঠা দু:সাধ্য।
জনগণকে কিভাবে ক্ষমতায়িত করা যায়, সে বিষয়ে কেউ তেমন কোনো কথা বলেন না। প্রয়োজন মনে করেন না। চেষ্টা তো নয়ই। সংসদীয় ব্যবস্থায় কি সত্যিকার অর্থে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন কি ঘটে। জসগণ যা চায়, তাই পায়? সংসদ কি সত্যিই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, জনতার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে? সত্যিকার অর্থেই কি জনতার কথা বলে বা বলতে পারে? সুতরাং ভোট হলেই বা কি আর না হলেই বা কি। সংসদ থাকলেও যে কথা না থাকলেও তাই।
আসলে কি হলে, কি করলে বা কিভাবে জনগণ ক্ষমতায়িত হতে পারে? সত্যিকার অর্থেই ক্ষমতাবান হবে। সবাই সব পক্ষ পুলিশ প্রশাসন, সেবা শিক্ষা, বিচার বিভাগসহ সব প্রতিষ্ঠান জনগনের কথাই শুধু ভাববে। তাদের কথা শুনবে, সেই মত চলবে। জনগণ যাতে সুবিধা পায় সব সেবা পায় সেই ব্যবস্থা করবে। তাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য সদা তৎপর ও সক্রিয়া থাকবে।
জনগণকে সত্যিকার অর্থে ক্ষমতায়িত করা প্রায় অসম্ভব। কারণ এই ব্যবস্থা সেটা চায় না। জনগণ বঞ্চিত অপমানিত বা প্রতারিত হলে কারুর কিছুই যায় আসে না। কথা শোনা বা ভালা মন্দের বিচার তো পরের কথা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার মত অবস্থাই অনেক সময় থাকে না।
রাজনৈতিক দলগুলো কি জনতার জন্য কাজ করে, তাদের কথা বলে। তাদের প্রতিনিত্ব করে? সংসদ বা প্রশাসন, পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কি জনগণের, এই রাষ্ট্রব্যবস্থা কি জনগণের? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই, তাই এসব নিতান্তই অবান্তর, অবাস্তব, অপ্রয়োজনীয়। জনতা কখনো কোনো কারণে তারা একতাবদ্ধ হলে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এক হতে পারলে বিশাল শক্তি। তবে এক হওয়াটা কঠিন। তারা চাইলেও এক হতে পারে না, তাদের এক হতে দেয়া হয় না।
একটা গণতান্ত্রকি সভ্য দেশে বা সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের মূল পরিচয় হচ্ছে জনগণের মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা। সব মানুষের সমান অধিকার সম মর্যাদা প্রতিষ্টা করা। সবাই সমান। অর্থ, পদ, পেশা, পজিশন, রাজনৈতিক পরিচয়, প্রশাসনিক অবস্থান কোনো কিছুই সমান মান মর্যাদার ক্ষেত্রে বাঁধা হতে পারে না।
এদেশে চর্চা করে মানুষকে অপমান অপদস্ত করার প্রক্রিয়া, কাঠামো, আচার আচরণ সব কিছু তৈরী করা হয়েছে। সহসা বা সহজে এর পরিবর্তন সম্ভব নয়। এখানে কে কাকে ছোট করবে, অপমান করবে সেই প্রতিযোগিতা চলে। সেখানে একজন সাধানরণ মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা নিশ্চয়ই যথেষ্ট কঠিন কাজ। এই অবস্থাই যাতে বহাল থাকে সেই চেষ্টাই চলে। এই দেশের পুলিশ প্রশাসন কখনই সাধারণ মানুষ বা আম জনতার জন্য নয়। তারা সেই বিশেষদের জন্য। তাহলে সংস্কার বা পরিবতর্ন কিভাবে সম্ভব।
যারা ক্ষমতাশালী, প্রভাববশালী, অর্থশালী তারা এই অবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বশক্তি ব্যয় করেন। তারা তো নয়ই এমন কি যারা এই বৈশম্যের শিকার তারাও অনেক সময় চান না। কারণ তারা জানেন চেয়ে কোনো লাভ নেই। এর চেয়ে কোনো মতে সব সহ্য করে কায় ক্লেশে বেঁচে থাকতে পারলেই হলো। গোটা কাটামো, সামাজিক প্রশাসনিক, শিক্ষা এবং পরিবারিক অবস্থার পরিবর্তনেরও প্রয়োজনও আছে। সেটা কি আদৌ সম্ভব। এর চেয়ে এই ভাল জনতা চিরদিন জনতা হয়েই থাক।
লেখক:
বায়েজিদ মিল্কী
লেখক, গবেষক, সাংবাদিক
লেখায় প্রকাশিত মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব। লেখাটি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সম্পাদকীয় অবস্থানের প্রতিফলন ঘটায় না।