নিজের ক্রিকেটীয় বোহেমিয়ান সেলিব্রেটি জীবন থেকে রাজনীতিক, রাজনীতিক থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের ক্ষমতার সর্বোচ্চ মসনদে বসেছিলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির প্রধান ইমরান খান। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় আচ্ছন্ন দেশটিতে তিনি কূটচালে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার যে লড়াই, সেটি থমকে গেল। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত দেশটির গণমানুষের জন্য যে আশার প্রদীপ তিনি জ্বালিয়েছিলেন, সেটি কিছুকালের জন্য নিভে গেল হয়তো। তবে এটি এমন নয় যে, তিনি আর কখনো ফিরে আসতে পারবেন না। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানকে নানা দিক থেকে বিচার বিবেচনা করলে দেশটিকে অদ্ভূত একটি দেশ হিসেবে মনে হবে। প্রতিবেশী তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পাকিস্তান। দেশটির রাজনৈতিক চরিত্র এতটাই অস্থির যে, তাদের চেয়ে আফগানিস্তানই ঢের ভাল আছে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে পাকিস্তানের মসনদে বসেছেন ২২ জন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। কখনো খুন হয়ে, আবার কখনো বিরোধী দলের অনাস্থার মুখে পড়ে গদি ছাড়তে হয়েছে তাঁদের। ইমরান খান দেশটির ১৫তম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট ২২ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে আগের প্রধানমন্ত্রীরা তাঁদের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করতে পারলে ১৫ তম সংসদে ১৫ তম প্রধানমন্ত্রীই হতেন ইমরান খান। এই যে হিসাবের অমিল, এ থেকেই দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আন্দাজ করা যায়।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় পাকিস্তানকে এক অর্থে বানানা রিপাবলিকও (Banana Republic) বলা যেতে পারে। এক কালে লাতিন আমেরিকার ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোকে বুঝাতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বানানা রিপাবলিক বা কলা প্রজাতন্ত্র অভিধাটি ব্যবহার করতেন। অস্থির পাকিস্তানে আস্থাভোটের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিদায়ে বানানা রিপাবলিক কথাটি আবারও সামনে এল। বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ, বেসামরিক সরকারের মাথার ওপর সামরিক বাহিনীর মাত্রাছাড়া ছড়ি ঘুরানো, ঘনঘন সরকার বদল, এমপি কেনাবেচার এমন অস্থির চরিত্রের কারণে পাকিস্তান সত্যিকার অর্থেই একটি বানানা রিপাবলিক বা কলা প্রজাতন্ত্র। বিরক্ত হয়ে ইমরান খান নিজেও এ কথাটা বলেছিলেন তাঁর ক্ষমতাচ্যূতির কয়েকদিন আগেও।
ইমরান বলেছিলেন, পাকিস্তান একটি কৌতুক এবং কলা প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এখানে কোনো রাখঢাক না রেখেই এমপি কেনাবেচা হয়। এটি আমাকে ভীষন কষ্ট দেয়। পশ্চিমা বিশ্বে এমন ঘোড়ার মতো এমপি কেনাবেচা কখনোই হয় না। একটি বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, ডলারের কাছে আমাদের নিজেদেরকে এভাবে বিকিকিনির কারণে কেউ আমাদের এখন সম্মান করে না। এ দেশের গণতন্ত্রের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। জাস্ট গণতন্ত্রের নামে এ দেশে কৌতুক চলে।
মার্কিন লেখক ও হেনরিই প্রথম বানানা রিপাবলিক অভিধাটা ব্যবহার করেন তাঁর লেখায়। ছবি: সংগৃহীত
বানানা রিপাবলিক বা কলা প্রজাতন্ত্র
বানানা রিপাবলিক বা কলা প্রজাতন্ত্র বলতে আসলে ব্যর্থ বা প্রায় ব্যর্থ কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকা ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে বুঝায়। এই বানানা রিপাবলিকের নিদারুন এক ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তান প্রসঙ্গে যাবার আগে বানানা রিপাবলিকের সেই ইতিহাসটি নিয়ে সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে।
লাতিন আমেরিকায় কিছু দেশে সস্তা শ্রম ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছিল গত শতাব্দীর প্রথম দিকে। আমেরিকায় তখন শিল্পবিপ্লব চলছে জোরসে। এ কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে বেশকিছু পুঁজিও জমা হয়েছে তখন। এ অবস্থায় লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে মুনাফা অর্জনের সুযোগ নিতে খুব বেশি দেরি করেনি আমেরিকান কোম্পানিগুলো।
আমেরিকায় শিল্পবিপ্লবের কারণে যে বিশাল শ্রমিকশ্রেণী তৈরি হয়েছিল, তাদের কাছে কলা একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হতে শুরু করেছে। লাতিন আমেরিকার আবহাওয়া ছিল কলা চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এজন্য আমেরিকার ফল কোম্পানিগুলো লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে কলা ও অন্যান্য ফল আমদানি শুরু করে। হন্ডুরাস কিংবা গুয়াতেমালার মতো দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয় পুঁজির বিশাল ঘাটতি থাকায় তারা পরবর্তীতে এই কোম্পানিগুলোর উপরেই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের জন্য নির্ভর করতে শুরু করে।
গুয়াতেমালা, লাতিন আমেরিকার একটি দেশ। ১৮৯৯ সালের দিকে আমেরিকার বোস্টনের একটি ফল কোম্পানি গুয়াতেমালায় ব্যবসা করতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি নামের ওই ধূরন্ধর প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণের বিনিময়ে গুয়াতেমালার বিশাল অঞ্চল দখলে নেয়। পরে ওই বিশাল অঞ্চলের জঙ্গলগুলো পরিষ্কারের মাধ্যমে তারা আবাদযোগ্য করে তোলে এবং স্থানীয় সুলভ শ্রম কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ কলা উৎপাদন করে।
গুয়াতেমালার অর্থনীতি তখন অনেকটাই কলানির্ভর হয়ে পড়ে। তাই গুয়াতেমালার সরকারকেও ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির দিকেই তাকিয়ে থাকতে হতো। ওই সুযোগে ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের আরও প্রসার ঘটায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও নিজেদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এক সময় দেখা যায়, গুয়াতেমালার প্রায় অর্ধেক জমি ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির হাতে চলে গেছে। এভাবে শুধু গুয়াতেমালাই নয়, হন্ডুরাসসহ ওই অঞ্চলের সরকারগুলোও নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর অঙ্গুলি হেলনে। ফলে এসব দেশে কোনো সরকার এসব কোম্পানির খবরদারির বিরুদ্ধে ‘মেরুদণ্ডী’ হয়ে উঠলেই সামরিক অভ্যুত্থাণ, নয়তো অন্য কোনোভাবে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে কলকাঠি নাড়তো এই কলামাফিয়ারা। ভঙ্গুর রাজনৈতিক এই অবস্থায় এসব দেশ এক সময়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রে (Failed State) পরিণত হয়। তখন থেকেই ব্যর্থ রাষ্ট্র বুঝাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বানানা রিপাবলিক শব্দবন্ধটি ব্যবহার করতে শুরু করেন।
বানানা রিপাবলিক শব্দবন্ধটি প্রথম ব্যবহার করেন আমেরিকান লেখক ও. হেনরি তার 'Cabbages and Kings' বইয়ে। হন্ডুরাসের তৎকালীন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি সে দেশের এই নাম দেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাছে এই শব্দজোড়া জনপ্রিয়তা লাভ করে। ঔপনিবেশিক শাসনকাল অতিক্রম করে এলেও বানানা রিপাবলিকগুলো আসলে নয়া উপনিবেশ ব্যতীত কিছুই নয়। এরকম রাষ্ট্রের সরকার দুর্বল হয়, তারা সরকারের বাইরের শক্তির দ্বারা বেশি করে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত হয়।
একটি রাষ্ট্র যখন সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য দায়িত্বগুলো পালনে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন সেই রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র (Failed State) বলে গণ্য করা হয়। বানানা রিপাবলিকও ব্যর্থ রাষ্ট্রের মতোই নেতিবাচক অর্থ বহন করে। বানানা রিপাবলিকে সরকারগুলো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কিংবা কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা বিদেশী শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দল কিংবা সরকারগুলো তখন স্বাধীনভাবে চলতে পারে না।
ইমরান খান নিজেও বলেছেন, পাকিস্তান দিনকে দিন একটি কলা প্রজাতন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান ও কলা প্রজাতন্ত্র
পাকিস্তানও বানানা রিপাবলিক হওয়ার দৌঁড়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবার চেয়ে এগিয়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান এবং তার রাজনীতি আমেরিকার দ্বারা বেশিমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত। তার ওপর আছে দেশটির সামরিক বাহিনীর খবরদারি। পাকিস্তানের সরকার গঠন ও পরিচালনায় আমেরিকার অদৃশ্য হাত যেমন রয়েছে, তেমনি উর্দিধারীদের বাইরে গিয়ে দেশ পরিচালনা করবে—তা কল্পনাও করা যায় না।
এসব কারণে বলা হয়, তিনটি ‘এ’ ফ্যাক্টর দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয় পাকিস্তানের রাজনীতি। অর্থাৎ পাকিস্তানের ক্ষমতার গদি চলে ’ট্রিপল-এ’ তত্ত্ব দিয়ে। এই ‘এ’ তিনটি হল: আল্লাহ, আর্মি ও আমেরিকা। ইমরান খান এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে একটি ‘এ’ অস্বীকার করায় তাঁর গদি হারালেন। কারো কারো মতে, ইমরান দুটি ‘এ’ কে পাশ কাটিয়ে গেছেন বা যেতে চেয়েছিলেন।
ইমরান খান ক্ষমতায় আরোহনের পর বরাবরই মার্কিন প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। গত বছর জুন মাসেই প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে খুব স্পষ্টভাষায় লিখেছিলেন, তাঁর দেশ আফগানিস্তানের শান্তির প্রশ্নে একসাথে কাজ করবে, কিন্তু মার্কিন বাহিনীকে পাকিস্তানে ঘাঁটি গড়তে দেবে না। শুধু ওই কলামেই নয়, তিনি তাঁর ক্ষমতার মেয়াদকালে বারংবার বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রভাবমুক্ত হয়ে দেশ পরিচালনা করতে চান।
জো বাইডেনের আমেরিকা চেয়েছিল পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আফগানিস্তানে আক্রমণ করতে। কিন্তু ইমরান খান তাঁদের অবাক করে দিয়ে এমন প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানান। এক সাক্ষাৎকারে এর কারণ হিসেবে ইমরান উল্লেখ করেছিলেন, মার্কিন নের্তৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে জড়িয়ে বা সহযোগিতা করে পাকিস্তান যে পরিমাণ ঋণ, অনুদানসহ আর্থিক ও সামরিক সাহায্য পেয়েছে, তার দ্বিগুণ ক্ষতি তাদের হয়েছে। প্রসঙ্গত, ইমরানের স্থানে অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী হলে এ প্রস্তাব তাঁরা লুফে নিতেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে অদ্যাবধি ইমরান খানের চেয়ে ভালো নেতা হয়ত পাকিস্তান পায়নি। তবে ভাল নেতা ও যোগ্য নেতার পার্থক্য। তিনি যথেষ্ট যোগ্য কিনা, ইতিহাসই সাক্ষ্য দেবে। রাজনীতি করতে যে কূটচাল জানতে হয়, কৌশলী হতে হয়, এই গুনগুলো তার ভেতরে কমই উপস্থিত। তিনি নির্লোভ। তিনি সাহসী। তিনি জনগণকে উজ্জীবিত করতে পারেন। নিঃসন্দেহে এই গুনগুলো একজন নেতার জন্য অলঙ্কার স্বরুপ। এই গুনগুলো জনগণের কাছে নেতাকে প্রিয় করে তোলে। কিন্তু যথেষ্ট দূরদর্শী না হলে, কৌশলী না হলে টিকে থাকা অসম্ভব। ইমরান খান জনপ্রিয় হয়েও যথেষ্ট দূরদর্শী না হওয়ার কারণে ক্ষমতাচ্যূত হলেন।
ইমরান দেশের জন্য নয়া এক পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন যা দেশকে কল্যাণ দেবে। কিন্তু মৌলবাদী গোষ্ঠী ও বিরোধী দল চার বছর ধরে রাজপথ দখল করে সক্রিয় থাকায় পিছিয়ে পড়ে পাকিস্তান। বিরোধীরা এ সময়কালে যেসব অভিযোগ এনেছে, সেগুলোর একটিরও ভিত্তি মেলেনি।
ইমরানের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ছিল। এরকম একটি অপপ্রচার হল: ইমরান খান তাঁর প্রথম স্ত্রী জেমিমার সাথে বিচ্ছেদের সময় বিলিয়ন ডলার নিয়েছেন। এই প্রচারণাও সঠিক নয়। জেমিমার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের সময় আইন মোতাবেক পাহাড় সমান অর্থ পেতে পারতেন ইমরান। কিন্তু আদালতে সবার সামনে ইমরান সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি এক কানাকড়িও নেবেন না।
সেনা তোষণের দিকেও যাননি ইমরান। উপরন্তু তাঁদেরকে চটাতেও চাননি তিনি। কিন্তু যে পাকিস্তানের উর্দিধারীরা আড়ালে সর্বক্ষণ সরকারের প্রশংসাবাক্য শুনতে অভ্যস্ত সেখানে ইমরান ছিলেন ব্যতিক্রম। যার ফল হয়েছে তিক্ত। অনেকে বলে থাকেন, ইমরান অনাস্থা ভোটের মুখে পড়ে সেনাবাহিনীর অনুকম্পা চেয়েছিলেন! কিন্তু ঘটনা মোটেও তা নয়। বিষয়টি খোলাসা করেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ও সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি। তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার পর দেশের ‘রাজনৈতিক অচলাবস্থা’ নিরসনের জন্য সাহায্য চেয়ে সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলে যে খবর ভেসে বেড়াচ্ছে, তা সঠিক নয়। দ্য ডনকে তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খাট্টাকের মাধ্যমে সামরিক নেতৃত্বই ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাঁকে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রস্তাবগুলো হলো: অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়া, পদত্যাগ করা অথবা নতুন নির্বাচনের আয়োজন করা।’ ইমরান খান অনাস্থা ভোটকেই তাঁর জন্য সম্মানের মনে করেছিলেন।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো তারাও ভুগতে শুরু করে। এ অবস্থায় দরকার ছিল রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা। কিন্তু ঘটল উল্টো ঘটনা। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকেরা রাজপথে বের হয়েছেন। লাখো মানুষ বিক্ষোভ করছেন ইমরানকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মারমুখী অবস্থানে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকেরা তো আছেই।
সামনের দিনগুলোতে দেশটির পরিস্থিতি আরও সকরুণ হয়ে উঠতে পারে। পুরোপুরি ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাতারে চলে যেতে পারে দেশটি। কলা প্রজাতন্ত্র হিসেবে যে পাকিস্তান নিজেদেরকে আরও পোক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে, তা এক প্রকার নিশ্চিত। কলা প্রজাতন্ত্রের যেসব লক্ষণ, তার সবগুলোই ধীরে ধীরে প্রকট হতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে দেশের মানুষ বেশি করে একজন ইমরান খানের অভাব অনুভব করবে।
লেখক: সম্পাদক, দ্য রিপোর্ট