প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলসহ অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছেন। সবাই জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
বুধবার (৩১ জুলাই) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা জানান।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়েছে। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে জামায়াত ও শিবিরিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দ্রুতই জানানো হবে।”
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে অবশেষে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উচ্চআদালতের রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হলেও জামায়াত ও দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মকাণ্ড পরিচালিত করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের জোটসঙ্গী হয়ে। বিভিন্ন সময় জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে উঠলেও এই এক দশকে সেটা করা হয়নি।
অবশেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটিকে। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে কোনও একক রাজনৈতিক দলকে নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নেই।
নতুন আইন করে জামায়াতের রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে দলটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। তারা কী করবে সেটা নিয়েও চলছে ধোঁয়াশা। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ ও ‘অসংবিধানিক’ বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত বাতিল হবে নির্বাহী বিভাগের আদেশে। খুব শিগিগিরই সরকার এই প্রক্রিয়া স্পষ্ট করবে।
ধাপে ধাপে নিষিদ্ধ ছিল জামায়াতের রাজনীতি
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলেই যাত্রা শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। তবে পাকিস্তান শাসনামল থেকে শুরু করে বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাজনৈতিক দল। ‘৪১’র ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ প্রতিষ্ঠা হয়। দলটি পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা এমনিকে ‘৪৬ নির্বাচনে মুসলিম লীগকেও সমর্থন করেনি।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উস্কানীর অভিযোগে প্রথমবার পাকিস্তানে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয় ১৯৫৯ সালে। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়। যদিও তারা ১৯৬৫ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলেন হিসেবে সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জোটে যুক্ত হয়।
‘৭০’র নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে চারটি আসন লাভ করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াতও এর আওতায় পড়ে।
১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামক একটি দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল।পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এ সময় এর ভারপ্রাপ্ত আমীরের পদ লাভ করেন আব্বাস আলী খান।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্ট রায় দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। কিন্তু সেখানেও রাজনৈতিক দল হিসেবে বাতিল করার কথা আসেনি।