আগস্ট ৩, ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘সামরিক উর্দি ও দলীয় পোশাকে আবৃত মেরুদণ্ডহীন’ একটি সংস্থা বলে দাবি করেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী।
ইসির বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, আগে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে ‘বঞ্চিত করা হয়েছে’ বাংলাদেশের মানুষকে; আর এখন পাঁয়তারা চলছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘বাধাগ্রস্ত করার’।
নির্বাচন কমিশনকে তাদের ‘ভুল শোধরানোর’ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলেও সতর্ক করেছেন এনসিপি নেতা।
রোববার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সিইসির সঙ্গে এনসিপি প্রতিনিধি দলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর তিনি কথা বলছিলেন।
এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশনকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ মন্তব্য করে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “দিন দিন দেখতে পাচ্ছি ইসির অধিকাংশ অঙ্গ জুড়ে সামরিক উর্দি পরা পোশাক এবং বাকি যতটুকু যারা আছে তারা দলীয় পোশাকে আবৃত। এখনও ইসিকে ভুল ধরিয়ে দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আগে মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারে নি। আমরা ভবিষ্যত যে বাংলাদেশের যাচ্ছি, সেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি দল ছাড়া অন্য কেউ ভোট নিতে এলে তাহলে সেখানে ইসি সমস্যার সৃষ্ট করবে, এ পরিস্থিতির দিতে যাচ্ছি। ইসি এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি পাঁয়তারা করছে।”
নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে যারা আবেদন করেছে, তাদের ছোটোখাটো ত্রুটি সংশোধন করে কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে রোববার।
এরই অংশ হিসেবে এদিন আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সঙ্গে এনসিপির প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে।
এসময় নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা উপস্থিত ছিলেন।
সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আগামী নির্বাচন হবে
নাসির উদ্দীন বর্তমান ইসির বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ তুলে বলেন, “দিন দিন এ ইলেকশন কমিশনকে দেখতে পাচ্ছি, ততই বুঝতে পারছি যে এটা মেরুদণ্ডহীন একটা ইলেকশন কমিশন।”
নাসির উদ্দীনের কথায় দেশকে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “এ প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধনের প্রসেসে গেছে এনসিপি, আবেদন জমা দিয়েছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, ইসি আগের আইনে গঠন ছিল। ইতোমধ্যে ইসি কিছু ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য দিয়েছে, যা যেটা প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেও আসেনি।
নাসির উদ্দিন বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যেসব কর্মচারী ভোট ডাকাতির সাথে জড়িত ছিল আমরা তাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম কিন্তু এ পর্যন্ত হয়নি। এখন আমাদের যে জুলাই সনদ হবে সেখানে এই নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়া এসেছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আগামী নির্বাচন হবে।”
সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছি
ইসিকে সতর্ক করে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, সাংবিধানিক সংস্থার বিরুদ্ধে সার্বিক চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
“এর আগে ইসিকে সংশোধনেরও সুযোগ দিচ্ছি। সামনে এটার কোথায় কোথায় সমস্যা জনগণের সামনে আমরা উদঘাটন করছি। জনগণের সামনে আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে ইলেকশন কমিশন যে একটা মেরুদণ্ডহীন সেটা আস্তে আস্তে প্রকাশ পাবে ইনশাআল্লাহ।
“আমরা তাদেরকে এখনও সুযোগ দিচ্ছি; তাদের সে শুভবুদ্ধির উদয় হোক এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসুক; ভোট নেওয়ার প্রসেস থেকে শুরু করে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেওয়ার জন্য সচেষ্ট হোক।”
এ ইসির অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে কী না না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা আপাতত যে অবস্থায় আছি, সেটা বলেছি। ভোট গত ১৫ বছরে দিতে পারেনি, ভোট নেওয়ার সিস্টেম নেই। আমি ভোট নিতেই না পারি, জনগণ যদি আমাকে ভোট দিতে আসে, আর আমাকে যদি ভোট নেওয়ার জন্য বাধাগ্রস্ত করা হয়, তাহলে কেন অংশ নেব আমরা?”
আগামীতে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন নাসির উদ্দিন।
“আমরা এটা প্রতিনিয়িত তাদের সাথে দেখা করছি, কথা বলছি। ভুল দেখিয়ে দিচ্ছি। তাদের কারেকশনের সুযোগ দিচ্ছি। এটা অতীতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করেছি, তখন আমরা সুযোগ দিয়েছি; আপনার কারেকশন হোন, আপনারা গুলি করবেন না। ইলেকশন কমিশন যদি সামরিক উর্দি পরে, দলীয় উর্দি পরে তার মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিতে চান এবং ভোট না দিতে চায়; তাহলে ফাইনালি সিদ্ধান্তে যেতে আমরা বাধ্য হব।”
এক প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, “আমরা আপনাদের সামনে হিন্টস দিয়ে যাচ্ছি, আগে ছিল ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে; এবার নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা এখনও ধৈযহারা হইনি।
নতুন তথ্য জমা দিল এনসিপি
নির্বাচন কমিশনে দল হিসেবে এনসিপি নিবন্ধনের আবেদন জমা দেয় গেল ২২ জুন। তথ্য পূরণে ৩ অগাস্ট পযন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
এদিন কমিশনে এসে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছে এনসিপি।
যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, “দলের নিবন্ধন আবেদনের তথ্য চেয়ে, পর্যবেক্ষণের আলোকে নতুন ডকুমেন্ট আজ জমা দিয়েছি ইসির কাছে। আশা করি, ইসি আমাদের নিবন্ধনের পরের ধাপে কাজ অগ্রসর হবেন।”
শাপলা প্রতীক ও নিবন্ধনের অপেক্ষার কথা জানিয়েছেন তিনি।
“প্রতীক বরাদ্দ হয় ইসি যখন নিবন্ধন সার্টিফিকেট দেয় তখন। যেহেতু নিবন্ধন সার্টিফিকেট এখনও পাই নি, সেই প্রতীক নিয়ে এখন কথা বলতে পারছি না। বিধিমালার তফসিলে নেই। কিন্তু যে কোনো পর্যায়ে এটা সংশোধনযোগ্য। ইসি চাইলে সংশোধন করতে পারে।”
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, “আমরা গত সপ্তাহে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়টি নিয়ে এসেছিলাম। আজ সুসংবাদ পেয়েছি যে আমাদের দাবি অনুযায়ী প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বাস্তবায়ন পদক্ষেপ, প্রস্তুতি, নিবন্ধন বিষয়ে ইসি দুই সপ্তাহ পর পর অনলাইন ব্রিফিং করবেন।”