ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৭:২৩ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘনে শোকজ নোটিশ জারি করলেও শাস্তির সম্মুখীন হয়নি কেউ। তবে চলতি সপ্তাহে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ইস্যু নিয়ে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে কারও প্রার্থিতা বাতিল করা হবে কিনা সে বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
যে সব প্রার্থীদের শোকজ বেশি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেছেন বেশিরভাগ প্রার্থী। এখন অব্দি সারা দেশে ৩০০ আসনের প্রার্থীর মধ্যে ১৫০ জনেরও বেশি শোকজ নোটিশ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ শোকজ পেয়েছেন বরগুনা -১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শোকজ দেয়া হয়েছে তিনবার। একই ভাবে কুমিল্লা–৬ আসনের প্রার্থী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে দুইবার শোকজ এবং চাঁদপুর-২ আসনের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে দুইবার শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তবে একাধিকবার শোকজ দিলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি যেহেতু লঙ্ঘন হয়েছে সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্ৰহণ করবে । আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ধরনের শোকজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাধিকবার শোকজ পাওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, এটা আমার একার কোনো সিদ্ধান্ত নয় এটা পুরো কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক বদিউল আলম মজুমদার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ২০০৮ থেকে এখন অব্দি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থিতা বাতিলের নজির এখনো পাইনি । তবে নির্বাচন যদি আসলেই সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে চান তারা তবে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যারা গুরুতর অপরাধ করেছেন তাদের প্রার্থিতা অবশ্যই বাতিল হওয়া দরকার।
একাধিকবার শোকজে যে শাস্তির বিধান রয়েছে
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলের বিবিধ অংশে ৯১ (ক) এর অংশে (৬গ) দফা (৬ক) এর অধীন কোনো আদেশ বা নির্দেশ জারি করা হইলে, কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে অনধিক এক লক্ষ টাকা, তবে অন্যূন বিশ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করিতে এবং, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করিতে পারিবে।
সেই সাথে (৬ক) কমিশন দফা (৬) এর অধীন কোনো সুপারিশ প্রাপ্ত হইবার পর উহা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় আদেশ বা নির্দেশনা প্রদান করিতে পারিবে। আর এই আদেশ বা নির্দেশ জারি করা হয়, সেইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে তাৎক্ষণিকভাবে উহা প্রতিপালন করিতে হইবে।
নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘনে শোকজ বিষয়ে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের পক্ষে থাকা সমর্থকদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় কিছু জায়গায় স্থানীয়ভাবে মামলা হচ্ছে। তবে নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে এখনো কোনো প্রার্থীর বিষয়ে প্রার্থিতা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত হয়নি। আচরণবিধি অমান্য করার বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম এবং স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কঠোর তৎপরতা রয়েছে। অভিযুক্তদের আর্থিক জরিমানা ও মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে আদালতেও পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার জানান, ইসির নিয়ম অনুযায়ী যা করার তা করা হচ্ছে। কমিশন সরাসরি একজনকে ডেকেছে (আমির হোসেন আমু) তিনি এসে জবাব দিয়েছেন। যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রকাশ হয়েছে, বাস্তবে তা হয়নি; এডিটিং করে প্রকাশ করা হয়। তবুও পরবর্তীতে আচরণবিধি মানার বিষয়ে সাবধান হবে বলে জানিয়ে গেছেন এ প্রার্থী।
আচরণ বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ইসি কঠোর নির্দেশ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব জায়গায় কঠিন বার্তা দেয়া হচ্ছে। আচরণবিধির মাত্রাও দেখতে হবে। ছোট আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য বড় শাস্তি দেয়া যাবে না, আবার বড় আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ছোট শাস্তি দেয়া যাবে না, প্রয়োজনে এটা যথাযথ হতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি হয়েছিল বেশ কিছু নীতিমালা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ অনুসারে নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রতীক ও পোস্টার, লিফলেট,হ্যান্ডবিল, নির্বাচনী ক্যাম্প,প্যান্ডেল, সভা-সমাবেশসহ যানবাহন এবং ভোট গ্ৰহণের দিন পর্যন্ত বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় নির্বাচনের তিন সপ্তাহ পূর্বে অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ এর আগে কোনোরূপ নির্বাচনী প্রচারণা সভা -সমাবেশ, ভোট চাওয়া এই ধরনের কোনো কাজ করা যাবে না।