ফ্যাসিস্ট পতনের পর দেশ বিনির্মাণে ‘আশার আলো’ দেখতে পাচ্ছি: মির্জা ফখরুল

বাসস

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম

ফ্যাসিস্ট পতনের পর দেশ বিনির্মাণে ‘আশার আলো’ দেখতে পাচ্ছি: মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে নতুন করে দেশ বিনির্মাণে ‘আশার আলো’ দেখছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সবাই অত্যন্ত আশাবাদী। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গেছে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পালিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে চেষ্টা করছে, তারা যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে সর্বশেষে ছাত্র-জনতার সমবেত প্রচেষ্টায় সেটা সম্ভব হয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার আশার আলো সবাই দেখছে। তবে এর জন্য সবার আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। এবং সত্যিকার অর্থেই আমরা যেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাসযোগ্য দেশ গড়তে পারি এবং সেই বাসযোগ্য দেশ তৈরি করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি।’

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ‘র মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব এসব প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র সাংবাদিক শহিদুল আলম ও শিল্পী রোকেয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

একজন গুণী, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক মানুষকে সরকার একুশে পদকের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৪-এর নির্বাচনের পর, ২০১৮ নির্বাচনের আগের সময়ে মাহফুজ উল্লাহ অনেক কাজ করেছেন। তখন সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য মাহফুজ উল্লাহ, মাহবুব উল্লাহ ও জাফর উল্লাহর অসাধারণ প্রচেষ্টা ছিলো। তারা ছিলেন বলেই ডান, বাম সবাই মিলে একটা জায়গায় আসা সম্ভব হয়। একেবারেই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন মানুষ ছিলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন।’

মাহফুজ উল্লাহ‘র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহর প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো তখনই সফল হবে যদি তার অরাধ্য কাজটা শেষ করতে পারি। আমাদের অনেক বয়স হয়েছে। এখন এখানে সব নবীনেরা আছেন, তরুণরা আছেন, তারা দেশকে নতুন করে চিন্তা করছেন। সেই চিন্তার মধ্যে কিন্তু সব সময়ই একটা জিনিস সবার মনে রাখা দরকার, সেটা হলো- মাহফুজ উল্লাহর যেসব বিষয় অর্থাৎ তারও আগে এদেশকে সুন্দর করার জন্য যাদের অবদান সেই অবদানগুলো যেন কখনো ভুলে না যাই।’

প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহ একজন ‘প্রগতিশীল’ ‘দেশপ্রেমিক’ ‘মেধাবী’ সাংবাদিক হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতে দ্বিধা করতেন না। যে কথাটা এখানে অনেকে বলেছে, তার যে বিতর্ক-তর্ক সেখানে তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবে তার বক্তব্যটুকু এমনভাবে উপস্থাপন করার তার যে সক্ষমতা ছিলো, প্রতিপক্ষ সেখানে নিঃসন্দেহে পরাজিত হতো।’

বিএনপির মহাসচিব অত্যান্ত আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহকে আমি মিস করি, সত্যিই মিস করি। তাকে হারানোয় সত্যিকার অর্থে আমাদের বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। খুশি হয়েছি যে, তাকে অত্যন্ত মরণোত্তর রিকগনেশন পাওয়াটা। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আর আসুন আমরা সবাই মাহফুজ উল্লাহর আত্মার শান্তির জন্য দেয়া করি এবং এই দোয়া করি যেন আমাদের সাংবাদিকরা সবাই চেষ্টা করে মাহফুজ উল্লাহর মতো হতে।’

প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর বড়ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ‘র সভাপতিত্বে সাবাব রায়হান কবীরের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, নজমুল হক নান্নু, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, ওয়াশিংটনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ডা. বজলুল গণি ভুঁইয়া, প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর পুত্র মোস্তফা হাবিব বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর বন্ধু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু তার প্রতি স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাহফুজ উল্লাহ চলে যাওয়ার পরে বড় একা হয়ে গেছি। আমার বন্ধু একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, মাহফুজ উল্লাহ দিনে-দিনে তৈরি হয় না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারের আন্দোলনে পেছন থেকে সাহসী ভূমিকার জন্য যিনি সর্ব প্রথম পদক পাওয়ার যোগ্য সে হলেন মাহফুজ উল্লাহ। দেরিতে হলেও তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিলো, মাহফুজ উল্লাহ তার লেখনীর মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস তার লেখনীতে জাতির সামনে তুলে ধরে গেছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের নানা অপকর্ম তার সাহসী সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। 

তিনি বলেন, চব্বিশে জুলাই আন্দোলনে আগে স্বৈরাচার পতনের পক্ষে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিলো, সেখানে মাহফুজ উল্লাহর অবদান অপরিহার্য। তিনি সমস্ত প্রতিবন্ধকতার ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন।

একই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, একজন মেরুদণ্ডওয়ালা সাংবাদিক ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ। তার মতো একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, জেলে থাকার সময় খালেদা জিয়ার জীবনী নিয়ে লেখায় ফুটে ওঠে বিএনপি নেত্রী কীভাবে আবার সাহস ও শক্তি নিয়ে ফিরে আসবেন। যা তিনি লিখেছিলেন তৎকালীন সরকারের রক্তচক্ষুর সামনেই। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

Link copied!