মে ১৯, ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দেশে ‘এক-দেড় মাসের মধ্যে’ নির্বাচন সম্ভব না হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে তার কারণ তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সোমবার, ১৯ মে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “পত্রিকায় এসেছে, নির্বাচন কমিশন বলেছে যে তারা জুনের মধ্যে ভোট করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। গতকাল (রোববার) জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের যিনি ভাইস চেয়ারম্যান, আলী রীয়াজ সাহেব, উনি বলেছেন, আমাদের আলোচনা প্রায় শেষ। আমরা এ মাসেই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় যাব।
“সেটা কী? যেসব বিষয় আমরা একমত হলাম, এটার একটা তালিকা করা, যদি আরেকটু কিছু করা যায় সেটা করা; করার পর একটা সনদ তৈরি করা, যেন সেখানে সবাই দস্তখত করতে পারে।”
নজরুল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সেটা করতে আর কত দিন লাগতে পারে? সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় মাস! এর বেশি তো না! দ্যান উই সাইন এ ডকুমেন্ট, আমরা একটা সনদে দস্তখত করলাম।
“এর মধ্যে যেটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব, কয়েক দিনের মধ্যে সেসব অধ্যাদেশ জারি হতে পারে। আর যেগুলো সম্ভব না, সেগুলো পরবর্তী সংসদে তোলার জন্য তো একমত হলাম। তাহলে আপনার (অন্তর্বর্তী সরকার) নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে করতে বাধাটা কোথায়?”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আপনারা যা বলছেন, তাতেই তো কোনো বাধা নাই। এখন যদি বলেন যে আরও দেরি করতে হবে, তাহলে কারণটা তো তাকেই বলতে হবে যে কেন দেরি করতে হবে? তা বলছেন না তারা।
“এখন কারণ যদি গোপন থাকে যে আমরা সংগঠিত হতে একটু সময় লাগবে, আপনি কারো কারো সঙ্গে জোট বানানোর চেষ্টা করছেন, সেই জোটটা বানানোর জন্য তো সময় লাগবে।… আরে ভাই গত ১৭ বছর যারা তার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, আমাদের যে তরুণ প্রজন্ম আজ পর্যন্ত ভোটই দিতে পারে নাই এবং দেশে একটা নির্বাচিত সরকার কায়েম হওয়ার মাধ্যমে দেশে রাজনীতি, দেশের অর্থনীতি যে সমাজ আরও সংগঠিত এবং সক্ষম হওয়ার যে সুযোগ, সেটা থেকে বঞ্চিত রাখবেন! এটা কি যুক্তিসংগত?”
তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, অবশ্যই আমরা সংস্কার চাই। যেসব সংস্কার প্রয়োজন, যেসব সংস্কার সম্ভব, যেসব ছাড়া একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না, তার সবগুলো আমরা করতে চাই।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহতকরণ ও তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের দাবি’ শিরোনামে এ আলোচনা সভা হয়।
আলোচনায় আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গও তোলেন নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “কেউ কেউ প্রচারের চেষ্টা করছে যে, আমরা নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চাই। আচ্ছা ভাবেন একবার, এই দলটা; যে দলের সরকার সবচেয়ে বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুম করেছে, খুন করেছে; বিএনপি চেয়ারপারসনকে মিথ্যা অভিযোগে ছয়টা বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, তাকে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছিল, তার ভাই মালয়েশিয়ায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন, বিএনপির মহাসচিবসহ এমন কোনো নেতা আছে, যার বিরুদ্ধে অন্তত ৫০টা মামলা নাই?
“আমাদের কথা বলে, আমরা আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করব, আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকব, এই ফাইজলামির কোনো মানে হয়? এটা কি সম্ভব? আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস কেউ করবে? আরে আমরা তো নাই, অন্য কেউ করতে গেলে তাকে পর্যন্ত আমরা বাধা দেব। আছে কিছু কিছু লোক নিজেদের বুদ্ধিমান দাবি করেন, কিন্তু তাদের বুদ্ধি কারো পক্ষে বা বিপক্ষে যখন যায়, তখন আর বুদ্ধিমান সঠিক থাকে না।”
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম খান, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ ও জাগপার ইকবাল হোসেন প্রধান বক্তব্য রাখেন।