আগস্ট ৪, ২০২৫, ০১:০৯ এএম
‘ফ্যাসিবাদ পতন’-এর বর্ষপূর্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রোববার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক জনসমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে তাদের ২৪ দফা ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’।
এই ইশতেহারে নতুন সংবিধান রচনা ও ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টায় এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ইশতেহার পাঠ করেন। তিনি বলেন, “এই ইশতেহার আগামী বাংলাদেশের কাঠামোগত রূপরেখা, যার ভিত্তিতে এনসিপি তাদের রাজনৈতিক পথচলা নির্ধারণ করবে।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এক বছর আগে এই স্থান থেকেই এনসিপি ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের ডাক দিয়েছিল, যা ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে কেবল শাসক পরিবর্তন নয়, শাসনব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনই এনসিপির লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
ইশতেহারের প্রথম দফায় একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত ‘জুলাই গণহত্যা’, ‘শাপলা চত্বর’ গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কারের বিষয় উঠে এসেছে। পঞ্চম দফায় দুর্নীতির দ্রুত বিচার, সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান এবং ‘হুইসেলব্লোয়ার প্রটেকশন আইন’ প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। ষষ্ঠ দফায় জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে র্যাব বিলুপ্তি, উপনিবেশিক পুলিশ আইন সংস্কার এবং স্থায়ী পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য দফায় স্থান পেয়েছে: সেবামুখী ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও “গ্রাম সংসদ” প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ গঠন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও গবেষণার আধুনিকায়ন, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, নারী নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন, তরুণদের কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি, টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, জাতীয় সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন, জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও অধিকার এবং বাংলাদেশকেন্দ্রিক স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশল।
সমাবেশে বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে আগামী বাংলাদেশ গঠনে এনসিপির সংকল্প তুলে ধরেন। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, “আমাদের রাজনীতি হলো সমাধানের রাজনীতি। আমরা এমন একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলব, যেখানে টাকার অভাবে কেউ মারা যাবে না।”
যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “গত ১৫ বছরে খুনি আওয়ামী লীগ দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে, এখন আমাদের প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন বলেন, “শেখ হাসিনার বিচার বাংলার মাটিতে হতেই হবে। আমরা রাজপথ ছেড়ে যাইনি, যাবও না।”
দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “লড়াই চালিয়ে যান। অর্থ, তদবির, টেন্ডার ছাড়া যদি টিকে থাকতে পারেন, তবে ইনশাল্লাহ এই শহীদ মিনার থেকেই সরকার গঠন করব।”
দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “যদি কেউ ভয় দেখায়, তাহলে পিছু হটবেন না। রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা হবে।”
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “শহীদ পরিবার ও আহতদের পক্ষে আমরা খুনিদের বিচার এবং পুনর্বাসনের দাবি জানাতে এসেছি। আমরা নতুন সংবিধান চাইতে এসেছি।”
সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”