ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার ঘটনায় নিজ দলের কাছ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস পেয়েছেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
তিন নেতাকে ছাড়িয়ে আনার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা আগামী তিন দিনের মধ্যে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানকে জানাতে বলা হয়েছে ওই নোটিসে।
বুধবার, ২১ মে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এমন নির্দেশনা দিয়েছে এনসিপি।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে প্রথম সারির নেতৃত্ব গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার পর সে সময় কয়েকদিন সাংগঠনিক নেতৃত্বের মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন মাসউদ ও তার বেশ কয়েকজন সহযোগী। আওয়ামী লীগের পতনের পরবর্তী তৎপরতায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোতেও দেখা গেছে মাসউদকে। এনসিপি গঠনের পর ক্রমেই ‘নিস্ক্রিয় হয়ে পড়া’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাসউদ ছিলেন মুখ্য সংগঠক। তবে রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠনের পর দলে তিনি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কের পদ পেয়েছেন।
হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিকের বাসায় মধ্যরাতে ঢোকার চেষ্টার সময় আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈনু। ওসি বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এনসিপির নোটিসে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক উক্ত তিনজনের অন্যতম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে নৈতিকতা স্খলনজনিত কারণে অব্যহতি প্রদান করা হয়। এতদ্বসত্ত্বেও, আপনি সংশ্লিষ্ট থানায় উপস্থিত হয়ে আটক তিনজনের মুচলেকা প্রদান করে থানা থেকে তাদেরকে জামিন করিয়েছেন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনার ব্যাখ্যা এবং আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার লিখিত বিবরণ আগামী তিন দিনের মধ্য শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের নিকট উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হল।”
ঘটনার শুরু সোমবার রাতে। ধানমন্ডি থানা এলাকার একদল যুবক হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফার বাসার সামনে গিয়ে হইচই শুরু করে এবং ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। ওই বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর আছে বলে স্লোগান দিতে থাকে তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ আসলে কথিত দোসরকে গ্রেপ্তারে পুলিশের ওপর চাপ দিতে থাকে যুবকরা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি ঘুরে যায়। থানমন্ডি থানা পুলিশ ওই যুবকদের তিনজনকে জামার কলার ধরে টেনে হেঁচড়ে থানায় নিয়ে আসে। অবস্থা বেগতিক দেখে বাকিরা পালিয়ে যায়।
পরের দিন মঙ্গলবার তাদেরকে ছাড়িয়ে আনতে ধানমন্ডি থানায় গিয়ে উপস্থিত হন আবদুল হান্নান মাসউদ। মুচলেকা দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনেন তিনি। এসময় কয়েকটি টিভি ক্যামেরার সামনে পড়লে বেশ বিব্রত দেখা যায় হান্নান মাসউদকে।
ছাড়া পাওয়া তিনজন হলেন পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী (২৬)।ফারহান সরকার দীনা (২৬) নামে আরেকজন সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়েন। আরেকজনের নাম মোহাম্মাদউল্লাহ জিসান (২৪), যিনি মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ কর্মী পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সহায়ক হিসেবে কাজ করেন।
ঘটনার পর তাবে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে ফেইসবুকে এ বিষয়ে মাসউদ লিখেন, “মোহাম্মদপুর থানা বৈবিছাআ’র আহ্বায়কসহ তিনজনকে আটক করা হয় মবসৃষ্টির চেষ্টাকালে, যার ফলে বৈবিছাআ’র পরিচয়ে স্টুডেন্টরা ধানমন্ডি থানায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছিলো। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধে আমি সেখানে যাই। সেখানে গেলে প্রশাসনের অনুরোধে বিষয়টির মধ্যস্থতা করি, যেহেতু প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ রুজু করেননি এবং করতেও চাচ্ছিল না। তাছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী একটা মঞ্চের ব্যানারে নিয়মিত মব সৃষ্টি করা ব্যক্তিদের মধ্যেও একজন সেখানে ছিল, যেটা পরবর্তীতে আমি জানতে পারি। এই বিষয়ে প্রশাসনকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ এই মবসৃষ্টির মূলহোতারা দ্রুত এরেস্ট হবে। ডিএমপিকে ওদের ব্যাপারে ইনফর্ম করা হয়েছে।”