সমন্বয়কদের নির্বাচন

নুসরাত তাবাসসুমের লড়াই দুই রেজার সঙ্গে

গোলাম রাব্বানী

মার্চ ১০, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম

নুসরাত তাবাসসুমের লড়াই দুই রেজার সঙ্গে

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নারী সমন্বয়ক হিসেবে শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নুসরাত তাবাসসুম। ডিবি হেফাজতে নেয়া একমাত্র নারী নেতৃত্ব ছিলেন তিনি। ক্যাম্পাস রাজনীতির সাথে ওৎপ্রত ভাবে জড়িত ছিল নুসরাত। তবে এবার শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতি নয় বরং সক্রিয়ভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নুসরাত তাবাসসুম।

ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া দৌলতপুরে বিভিন্ন ত্রাণ ও দাতব্য কর্মসূচিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাকে। কুষ্টিয়া ১ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন জোরেশোরে।

একনজরে কুষ্টিয়া ১

কুষ্টিয়া ১ আসনটি বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর এলাকা নিয়ে গঠিত। এই আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাদেও দুইদফা স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিল। শেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনেও স্বতন্ত্রপ্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী নির্বাচিত হয়।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন ৫ জন দায়িত্ব পালন করে এই আসনে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও মূলত এটাকে বিএনপির ঘাঁটি বলা যায় না। ২০০১ সালে বিএনপির হয়ে আহসানুল হক মোল্লা নির্বাচিত হলেও তার মৃত্যুর পর ২০০৪ সালের উপ নির্বাচনে তার ছেলে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি দৌলতপুরের বিএনপির সভাপতি পদেও আছেন। ফলে এই আসনে দুই রেজার শক্ত অবস্থান রযেছে।

এদিকে ২০১৪ সালে এই আসন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী নির্বাজিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী একচেটিয়া নির্বাচিত হলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রেজাউল হক চৌধুরী নির্বাচিত হন। 

ভোটের চিত্র

কুষ্টিয়া ১ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৮। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রপ্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী ৮৯ হাজার ২৭৪ ভোটে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ.কা.ম. সরওয়ার জাহান বাদশা নৌকা প্রতিকে পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৬১ ভোট।

তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ.ক.ম সরোয়ার জাহান বাদশা পেয়েছেন দুই লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে রেজা আহমেদ বাচ্চু পেয়েছেন তিন হাজার ৪২০ ভোট। যদিও তিনি তখন কারাগারে ছিলেন।

এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী আনারস প্রতীক নিয়ে ৫২ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী নৌকা প্রতীকে আফাজ উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯০৯ ভোট।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফাজ উদ্দিন আহমেদ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩ ভোট। বিএনপি প্রার্থী আলতাফ হোসেন পেয়েছেন ১ লাখ ২ হাজার ৪১২ ভোট।

এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী আহসানুল হক মোল্লা। তিনি ১ লাখ ৮ হাজার ৩২৬ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফাজ উদ্দিন আহমেদ ১ লাখ ৩ হাজার ৪৯১ ভোট পান। যদিও ২০০৪ সালে আহসানুল হক মোল্লার মৃত্যুর পর তার ছেলে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা নির্বাচিত হন।

তবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন আহসানুল হক মোল্লা। সে সময় তিনি ভোট পান ৬৪ হাজার ৬৯৯। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফাজ উদ্দিন মোল্লা পান ৪৭ হাজার ৫৩ ভোট।

১৯৯১ সালের ৫ ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৬ হাজার ৮০৪ ভোট জয়লাভ করেন বিএনপি প্রার্থী আহসানুল হক মোল্লা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী কোরবান আলী ভোট২৬ হাজার ১৪০ ভোট।

নুসরাত তাবাসসুমের বেড়ে ওঠা

নুসরাত তাবাসসুমের ডাকনাম জ্যোতি। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাগুয়ান গ্রামে। তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। স্কুল ও কলেজ জীবন কুষ্টিয়ায় ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নুরের ছাত্র অধিকার পরিষদে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন। পরবর্তীতে আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিতে তিনি যুগ্ম সদস্য সচিব পদে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মূলত কুষ্টিয়া ১ আসনটি বিএনপির প্রার্থী আহসানুল হক মোল্লার একক কর্তৃত্ব ছিল। তাকে পচা মোল্লা বলেও এলাকাবাসী ডাকতো। একসময়কার বিখ্যাত পচা সাবানের উদ্যোক্তা ছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এই আসনে বিএনপির অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। এতটাই নাজুক অবস্থা যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে একসাথে দুইজনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল মামলা জটিলতায় কোন প্রার্থী বাতিল হলে অন্য প্রার্থী যেন দাড়াতে পারে। তবে বর্তমানে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা দলটির মনোনয়ন পাবে বলে আশা করছেন। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুইবার হয়ী হওয়া রেজাউল হক চৌধুরীও নির্বাচন করতে পারেন। সব মিলিয়ে নুসরাত তাবাসসুমের সামনে দুই রেজার অগ্নিপরীক্ষা রয়েছে।

Link copied!