প্রবাসী ভোটার দেড় কোটি তবে পোস্টাল ব্যালটের আবেদন মাত্র ১২ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ০১:৪৭ পিএম

প্রবাসী ভোটার দেড় কোটি তবে পোস্টাল ব্যালটের আবেদন মাত্র ১২ হাজার

ভোটের দিন সকালে ৯২.৯৫ শতাংশ বা ৩৯ হাজার ৬১ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। ফাইল ছবি

প্রবাসী দেড় কোটি থাকলেও তাদের সকলকে ভোটে আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসী, কয়েদী, নিজ এলাকায় ভোট দিতে না পারা ব্যক্তিদের ভোট প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়। তবে মাত্র ১১ হাজার ৮৮২টি পোস্টাল ব্যালটে ভোটের আবেদন পড়েছে। 

এদিকে কারচুপি ঠেকাতে এবার অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটের দিন সকালে ব্যালট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ভোটের দিন সকালে ৯২.৯৫ শতাংশ বা ৩৯ হাজার ৬১ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। আর ২ হাজার ৯৬৪ বা ৭ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের আগের দিন। এ ছাড়া গতকাল বেশ কিছু দুর্গম কেন্দ্রে হেলিকপ্টারযোগে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। 

বুধবার রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। তবে পোস্টাল ব্যালটে এত কম ভোটার হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কোন গাফেলতি আছে কি এমন প্রশ্নে সাবেক ইসি মো. শাহনেওয়াজ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, কেউ যদি বিদেশ থাকে আর দেশে যখন ভোট হয় এটা আপনা-আপনি ভাবে ভোটারের মাথায় থাকে কীভাবে সে ভোট দেবে এটার জন্য আলাদা কোনো নোটিশের দরকার নেই। আমাদের নির্বাচনি যে ম্যানুয়াল তৈরি হয় তাতে পোস্টাল ব্যালটের আইন আছে। কেউ যদি পোস্টাল ব্যালট ভোট সম্পর্কে না জানে এইটা তাঁর অজ্ঞতা। নিজের অজ্ঞতা কখনোই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার মানে নেই।

পোস্টাল ব্যালট কী?
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ২৭ ধারায় অনুযায়ী, প্রযোজ্য ভোটাররা ডাক বিভাগের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এই নিয়মের অন্তর্ভুক্ত নির্দিষ্ট কয়েকটি গোষ্ঠী যেমন- কারাবন্দি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, প্রবাসী বাংলাদেশি, পোলিং অফিসার এবং যারা সশরীরে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবেন না এমন ব্যক্তি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এমন অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

পোস্টাল ব্যালট কীভাবে ব্যবহার করা হয়?
পোস্টাল ব্যালট ব্যবহার করতে হলে ভোটারকে সংশ্লিষ্ট এলাকার রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদনে নাম, ঠিকানা এবং ভোটার তালিকার সিরিয়াল নম্বর উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং অফিসার ওই ভোটারকে একটি ব্যালট পেপার ও খাম পাঠান। পছন্দের মার্কায় ভোট দিয়ে প্রদত্ত খামে ঢুকিয়ে ব্যালট পেপারটি ফেরত পাঠাতে হয়। ফেরত পাঠানো খামে পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষের সনদ এবং রাবার স্ট্যাম্পের সিল থাকা আবশ্যক। নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখের আগেই পোস্টাল ব্যালট বিতরণ এবং ফেরত আনা হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার পোস্টাল ভোট গণনা করেন। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরে আসা পোস্টাল ব্যালট গণনায় ধরা হয় না।

নির্বাচন কমিশনের ক্যাম্পেইন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানকে উৎসাহিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এই পদক্ষেপের ইতিবাচক উদাহরণ রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পোস্টাল ব্যালটে ভোটদান। 

মার্কিন নির্বাচনে পোস্টাল ভোট
২০২০ মার্কিন নির্বাচনে পোস্টাল ভোটিংয়ের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেবার কোভিড মহামারির কারণে অনেক ভোটারই কেন্দ্রে যেতে পারেননি। ওই নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মার্কিন ভোটার পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতিতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

২০১৬ সালেও প্রায় তিন কোটি মার্কিন ভোটার এই পদ্ধতিতে ভোট দেন। যা ছিল তৎকালীন ভোটারের প্রায় ২৫ শতাংশ।

Link copied!