সমন্বয়কদের নির্বাচন

হান্নান মাসুদের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দী একজন

গোলাম রাব্বানী

মার্চ ৯, ২০২৫, ০৭:১২ পিএম

হান্নান মাসুদের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দী একজন

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ। ৫ আগস্টের পর থেকে খোলাখুলিভাবেই নির্বাচন করবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। সেই সাথে নিজ এলাকা নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে বিশাল সংবর্ধনাও পান। নোয়াখালী ৬ আসন থেকে নির্বাচন করার চিন্তা করছেন তিনি। যদিও এই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দী হিসেবে আছেন বিএনপির সাবেক এমপি ফজলুল আজিম।

নোয়াখালী ৬ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ভোটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়। তবে বিএনপির প্রার্থী ফজলুল আজিম দুইবার নির্বাচিত হন। যদিও ২০০৮ সালে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হন। ফলে সেই সংসদে তিনিই একমাত্র স্বতন্ত্র নির্বাচিত প্রার্থী ছিল। তবে তিনি ২০১৮ সালের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। বর্তমানেও সক্রিয়ভাবে বিএনপির রাজনীতি করছেন। ফলে হান্নান মাসুদের শক্ত প্রতিদ্বন্দী হিসেবে ফজলুল আজিমকেই ভাবছেন অনেকে। 

নোয়াখালী ৬-এর চিত্র

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩,১৫,১৩৩। নোয়াখালী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী এক লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মুশফিকুর রহমান পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৩৬ ভোট।

২০১৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আয়েশা ফেরদৌস নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার ১৫টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির ফজলুল আজিম ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৭১৫ ভোট। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮২০ জন।

২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে এই আসনে নৌকা প্রতীকে বেগম আয়েশা ফেরদাউস ৬৭,৫৪৭ টি ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে লড়াই করা মোঃ আমিরুল ইসলাম। তিনি ৩০,৯১৯ টি ভোট পেয়েছিলেন। 

২০০৮ সালে সংগঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কেউই জয় লাভ করেনি। ৭২,৯৬৯ ভোট পেয়ে জয় লাভ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ ফজলুল আজিম। যদিও তিনি ১৯৯৬ সালে বিএনপির হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী বেগম আয়েশা ফেরদৌস। পেয়েছিলেন ৬৭,৯৮৩ ভোট। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মোঃ শাখাওয়াত হোসেন পেয়েছিলেন মাত্র ৬৮০ ভোট।

এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আলী। পেয়েছিলেন ৩৭,৪৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোঃ ওয়ালী উল্লাহ পেয়েছিলেন ৩৩,০৩৬ ভোট। বিএনপি প্রার্থী মোঃ ফজলুল আজিম পেয়েছিলেন ২৮,৩৩৫ ভোট।

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি জয় লাভ করে। বিএনপি প্রার্থী মোঃ ফজলুল আজিম পেয়েছিলেন ৩০,১৪৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোঃ ওয়ালী উল্লাহ। পেয়েছিলেন ২৭,৩৫৮ ভোট। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া মোঃ আলী পেয়েছিলেন ২৫,৩৬০ ভোট। জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী মোঃ আবুল হোসেন পেয়েছিলেন ১,২৯৫ ভোট।

১৯৯১ এর পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোঃ ওয়ালী উল্লাহ ৩২,৫৯০ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জাতীয় পার্টির মোঃ আলী পেয়েছিলেন ১৮,৬৫৫ ভোট। জামায়াতে ইসলামীর আবুল হোসেন পেয়েছিলেন ৬,২১৫ ভোট এবং বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান পেয়েছিলেন ৪,৭৮১ ভোট।

হান্নান মাসুদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

হান্নান মাসুদ নোয়াখালীর হাতিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব ছিলেন। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হন। নাহিদ, আসিফসহ ৬ জন সমন্বয়ক যখন ডিবি কার্যালয়ে আটক অবস্থায় ছিল তখন হান্নান মাসুদ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। তিনি ফেসবুক পোস্ট ও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান। এছাড়া স্পষ্ট বিবৃতি নামে বিভিন্ন যে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি থেকে সেগুলোর সমন্বয়ও হান্নান মাসুদ করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নোয়াখালী ৬ আসনে পুরোদস্তর রাজনীতিবিদ কম ছিল। সব মিলিয়ে বিএনপি নেতা ফজলুল আজিম এখন পর্যন্ত শক্ত প্রতিদ্বন্দী আব্দুল হান্নান মাসুদের জন্য।

Link copied!