জনগণ করুণার পাত্র নয়, সরকারের মান-অভিমানের কোনো সুযোগ নেই: তারেক রহমান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৫, ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম

জনগণ করুণার পাত্র নয়, সরকারের মান-অভিমানের কোনো সুযোগ নেই: তারেক রহমান

ছবি: সংগৃহীত

জনগণ কোনো সরকারের করুণার পাত্র নয়, সরকারের মান-অভিমান বা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রোববার, ২৫ মে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের আমলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা রকম দমন-পীড়ন ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে, এনপিপিও সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি। বিতাড়িত ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরতে না পারে, সেটিই হোক বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ করে রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার। সংস্কারের বিকল্প নেই, আবার অল্প বা বেশি সংস্কার বলেও কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।’

‘আমি মনে করি রাষ্ট্রে স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিবাদ রুখে দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের নিয়ে সংসদ সরকার গঠিত হলে অবশ্যই সেই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য,’ বলেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারসরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে।’

‘এ কারণেই হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে হলেও অবশ্যই নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার থাকতে হবে,’ বলেন তিনি।

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘দেশের জনগণ কোনো সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান কিংবা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘হাজারো শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতার সংকট নেই। তবে অবশ্যই এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয়, সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন।’

‘জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা কার্যকর ও টেকসই হয় না,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকার সব দায়িত্ব পালন করবেজনগণ হয়তো এমনটি আশা করে না। তারপরও সরকারকে নিয়মমাফিক কিছু কাজ করতে হয়।’

‘এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সরেজমিন অভিজ্ঞতা না থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়মমাফিক চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রতিটি বছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে মূল প্রতিবন্ধকতা,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের হয়তো সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মুখ্য। এমন বাস্তবতায় বাজেট পাশের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচল অবস্থা সৃষ্টি করেছে, এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য কিন্তু খুব ভালো বিষয় নয়।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয় নয়। দেশের স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায়, একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অপরদিকে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এক রকমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।’

জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ধরনের অজুহাত কিংবা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পতিত পলাতক পরাজিত স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ফ্যাসিবাদ উত্থান মোকাবিলায় একতরফা ইস্যুতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বিগত ৫ আগস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারো জাতীয় নির্বাচনের তারিখ-দিন সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে। নির্বাচনের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমরা যারা একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।’

‘সুতরাং দেশে-বিদেশে সম্মানিত দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ-নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবেআজকে এনপিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশা রাখছি।’

Link copied!