নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পরই তুমুল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে সঙ্গবদ্ধ মৌমাছির দলের মতো। শুধু এক পক্ষ নয়, ফারুকী শিকার হচ্ছেন সর্বদলীয় সমালোচনার। তিনি কোন পক্ষের, তা নিয়ে টলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এই অবস্থার মধ্যে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে হটানোর জন্য ২০১২ সালেই পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। এমনকি তখন তিনি গোপনে আমেরিকান ক্লাবে গিয়ে আলোচনা করতেন। কথা বলতেন সাধারণ বাটন ফোনে।
ফারুকী তার পোস্টে লিখেছেন, মাত্রই দুই দিন হলো, আমি কাজ করছি। যদিও আমি কোনও পদ চাই নাই, তবুও দায়িত্বটা নেয়ার পর, আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এর মধ্যে আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে এক অবিশ্বাস্য অভিযোগের- আমি নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর! যেই ফ্যাসিস্টকে তাড়ানোর জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালাম ১৬ জুলাই থেকে, অল আউট অ্যাটাকে গেলাম, এটা জেনে যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা টিকে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু অথবা জেল, আমি তারই সহযোগী?
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের যে আন্দোলন হয়েছিলো, সেখানে সরব উপস্থিতি ছিলো নতুন উপদেষ্টা ফারুকীর। অনেকেই মনে করেন, শাহবাগের আন্দোলনের পেছনে ছিলো আওয়ামী লীগ।
সেই আন্দোলনে যোগ দেয়ার ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন, শাহবাগ আন্দোলন যখন শুরু হয়, আর সবার মতো আমিও ভেবেছিলাম, এটা নির্দলীয়। যে কারণে আমার সব পোস্টে এটাকে ঠেলে “রাষ্ট্র মেরামতে” এজেন্ডার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই যখন বুঝে যাই, তখনই লিখি “কিন্তু এবং যদির খোঁজে”।
আরও পড়ুনঃ একুশে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকীর মনে লিখেছেন, অনেকে বলছে, আমি ভারতীয় হেজেমনির অংশ।আমি পৃথিবীর কোনো দেশেরই ঢালাও নিন্দা করি না। কারণ দেশে নানা চিন্তার মানুষ থাকে। আমি সবার সাথেই কথা বলতে চাই, কাজ করতে চাই। কিন্তু আমার দেশের ক্ষতি হলে, আমি তার বিরুদ্ধে বলতে কুণ্ঠা করি না। ফেলানীর মৃত্যুর পর কী পোস্ট দিয়েছিলাম ২০১৩ সালে সেটা দেখতে পারেন নিচে।
এক অনন্ত ভয়ের ঘরে বাস করে এসেছি- মন্তব্য করেন নিজের পোস্টে ফারুকী লিখেছেন, আমরা কথা বলতে ভয় পেতাম। এমন কি, কথা বলার সময় ঘরে ফোন থাকলে সরিয়ে ফেলতাম। পাছে আড়ি পাতে। আমার মনে আছে ২০১২ সালে শুধু মাত্র কথা বলার জন্য আমি আর ‘আরিফ আর হোসাইন’ লুকিয়ে আমেরিকান ক্লাবে গিয়ে বসে আলাপ করতাম কীভাবে এই জালিম সরকারকে হটানো যায়। বিএনপি এবং জামাত কিছু করতে পারবে? আর্মির মনোভাব কি? জোনায়েদ সাকির সাথে বাটন ফোনে কথা বলে গোপনে দেখা করতাম আর পরামর্শ করতাম, কি করা যায়। সেই আমি আওয়ামী ফ্যাসিজমের পার্ট?
ফারুকী আরও লিখেছেন, আমি তো কোনো বিপ্লবী নই। ছিলাম না কোনো কালে। আমি ফিল্মমেকার। ঘটনাচক্রে এবং আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি আমার সেই পরিচয়েই গর্বিত। আমি মারা গেলে আমাকে ফিল্মমেকার হিসাবেই মনে রাখা হবে, মন্ত্রী হিসাবে না। ফলে মন্ত্রিত্ব আমার কাছে কোনো অর্জন না, পাবলিক সারভেন্টের দায়িত্ব মাত্র।