জুলাই ২৭, ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম
চাকরিতে প্রবেশে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে অবস্থান সাধারণ শিক্ষার্থী সমাবেশ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যাওয়ায় জারি করতে হয়েছে কারফিউ। ১ মাসের ব্যবধানে দেশেজুড়ে বিক্ষোভ, নিহতের ঘটনা সেই সাথে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙচুর। সব মিলিয়ে অনেকটা চড়াই উৎরাই পেরিয়েছে সর্বস্তরের জনগণ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহ নিয়েই আজকের আয়োজন। চলুন জেনে আসি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কোন দিন কি কি ঘটেছিল।
১ জুলাই : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে অবস্থান করেন তারা। সেই সাথে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বিক্ষোভ পালন করে।
২ জুলাই : শাহবাগে এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০ মিনিট ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।
৩ জুলাই : শাহবাগ মোড় দেড় ঘন্টা অবরোধ করেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া একই দিন আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
৪ জুলাই : মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। সে সময় প্রধান বিচারপতি এই রায়ের বিষয়ে বলেন আন্দোলন করে কি আদালতের রায়ের পরিবর্তন করা যায়। এ্যাটর্নী জেনারেল স্ট্যাটাসকো চাইলে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, নট টুডে।
৫ ও ৬ জুলাই : সারাদেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। শাহবাগের মোড় অবরোধ, বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করা হয়। এছাড়া জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এই সমাবেশের মাধ্যমে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
৭ জুলাই : বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষনা দেন।
৮ জুলাই : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সহ ঢাকার ১১ টি স্থান, ৩টি রেলপথ এবং ৬টি মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর‘জিরো পয়েন্ট’ ব্লক করে রাখায় দক্ষিণ বঙ্গের সাথে যাতায়াতও অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।
৯ জুলাই : সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেড পালন করেন কোটা আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় তাদের দাবি বিচার বিভাগের সাথে নয় বরং নির্বাহী বিভাগের সাথে। কেননা তারা কোটা বাতিল নয় বরং কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছে।
১০ জুলাই : কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। তবে শিক্ষার্থীদের সকাল সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি চলমান ছিল। এই দিনে সকালের পর থেকে রেলপথ যাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে।
১১ জুলাই : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা একই সময়ে কর্মসূচি দেয়। এদিকে দুপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি করে তিনটি সংগঠন।
১২ জুলাই : পুলিশের বাধার মুখে সারাদেশে বিক্ষোভ পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
১৩ জুলাই : রাষ্ট্রপতির নিকট স্মারকলিপি দেয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
১৪ জুলাই : স্মারকলিপি জমা দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ পালন।
১৫ জুলাই : দুপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের অবস্থান।
১৬ জুলাই : সারাদেশে বিক্ষোভ,সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। ঢাকা,চট্টগ্রাম ও রংপুরে নিহত হয় ৬ জন। দেশের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়।
১৭ জুলাই : সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। গায়েবানা জানাজার টিএসসিতে হওয়ার কথা থাকলেও বাধার মুখে সেটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে করা হয। এসময় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে রাতে পুড়িয়ে দেয়া হয় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা।
১৮ জুলাই : দেশব্যাপী সংঘর্ষে নিহত হয় ২৭ জন এবং প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর সন্ধ্যা থেকেই ইন্টারনেট বিছিন্ন করা হয় দেশবাসীকে। বিটিভি ও মেট্রোরেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
১৯ জুলাই : সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা হয় এবং বাতিল হয় প্রধানমন্ত্রীর স্পেন ও ব্রাজিল সফর। যাত্রাবাড়ীতে রাতভর সংঘর্ষ চলে। ৩৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আটকে পড়ে।
২০ জুলাই : কারফিউয়ের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়। হেলিকপ্টারে ৩৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনী রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিতে থাকে।
২১ জুলাই : সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৯৩ শতাংশ এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের কোটা ১ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশে নামিয়ে আনার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
২২ জুলাই : কোটার নতুন প্রজ্ঞাপনে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।
২৩ জুলাই : দেশব্যাপী চলে আটক ও গ্রেফতার অভিযান। সারা দেশ থেকে ২ হাজারের বেশি সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়।
২৪ জুলাই : আবারও কারফিউ বহাল করা হয়। তবে রাতে বাণিজ্যক এলাকা সমূহের ইন্টারনেট সচল করা হয়। ফেসবুকে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
২৫ জুলাই : কারফিউ বহাল তবে সীমিত আকার নৌপথে যাতায়াত শুরু। প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল ক্ষতি পরিদর্শন করেন।
২৬ জুলাই : প্রধানমন্ত্রী বিটিভি, ঢাকা মেডিকেল ক্ষতিগ্রস্থদের পরিদর্শন করেন। কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীকে নিরাপত্তার স্বার্থে তুলে নিয়ে যায় ডিবি।
২৭ জুলাই : আহতদের দেখতে প্রধানমন্ত্রী পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
২৮ জুলাই : মোবাইল ইন্টারনেট বিকেল তিনটায় চালুর সিদ্ধান্ত। সকল গ্রাহককে ৫ জিবি ইন্টারনেট বোনাস দেয়ার ঘোষণা। ৩৪ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা প্রদান।
২৯ জুলাই : আন্দোলনে নিহতের প্রতিবাদ এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশে হয়। আটকসহ আহত হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলে কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি না চালানোর রিট আইনজীবীদের।
৩০ জুলাই : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্যান্য নিহতদের স্মরণে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন।
৩১ জুলাই : ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালন। নির্যাতন নিয়ে শিক্ষাথীদের চিত্রাঙ্কন/গ্রাফিতি, দেয়াল লেখন, ফেস্টুন তৈরি, ডিজিটাল পোর্ট্রেট তৈরি। ঢাকা ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদকে স্থানান্তার।
১ জুলাই : ডিবি থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় কোটা আন্দোলনের ৬ সম্বনয়ককে। শিক্ষক ও সুশীল সমাজের অবস্থান কর্মসূচি।
২ জুলাই : কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত সংর্ঘষে উত্তরায় ২জন নিহত। শিল্পীদের বিক্ষোভ।