‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা’ মডেলে জয়-পুতুলকে দলের নেতৃত্বে আনছেন শেখ হাসিনা?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০২:২৮ পিএম

‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা’ মডেলে জয়-পুতুলকে দলের নেতৃত্বে আনছেন শেখ হাসিনা?

ছবি: সংগৃহীত

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ এখন ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। দলের প্রধান, শেখ হাসিনা, বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে তার অনুপস্থিতিতে দল কীভাবে পরিচালিত হবে, সেই ‘সাকসেসন প্ল্যান’ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।

সম্প্রতি বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনা তার দুই সন্তান, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আর এই পরিকল্পনাকে বলা হচ্ছে ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেল’।  

কেন এই পরিবর্তন?

দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে দলের হাল কে ধরবেন, তা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। গত বছর সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখা যায়, তার অন্যতম কারণ ছিল এই নেতৃত্বের শূন্যতা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলটির কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা এখন উত্তরাধিকারের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বাধ্য হচ্ছেন। বয়স এবং পরিস্থিতির চাপ—এই দুটি কারণই এই সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করছে বলে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। 

‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেল’ কী?

ভারতের কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব কাঠামোকেই বলা হচ্ছে ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেল’। এই মডেলে রাহুল গান্ধী দলের প্রধান মুখ হিসেবে কাজ করেন, আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে থাকেন। তিনি কখনো রাহুলকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি, বরং তার পাশে থেকেছেন। গত বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা ইচ্ছে করেই নিজে কোনো আসনে দাঁড়াননি, যাতে সব আলো রাহুলের ওপর থাকে। পরে রাহুল তার ছেড়ে দেওয়া ওয়েনাড আসন থেকে প্রিয়াঙ্কাকে উপনির্বাচনে জিতিয়ে লোকসভায় নিয়ে আসেন। শেখ হাসিনা ঠিক এই মডেলটিই তার দল, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে চাইছেন। 

জয় এবং পুতুল: নতুন জুটি?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনা সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল—এই দুজনকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আনতে চাইছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় দীর্ঘদিন ধরে মায়ের পর দলের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। তিনি নিয়মিত দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। অন্যদিকে, সায়মা ওয়াজেদ সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে তিনি এখন পুরো মনোযোগ রাজনীতিতে দিয়েছেন। যেহেতু তিনি মায়ের সঙ্গে একই শহরে অবস্থান করছেন, তাই সরাসরি সহায়তা করতে পারছেন। তিনি মায়ের দেওয়া ভাষণের খসড়া তৈরি, কর্মসূচি ঠিক করা এবং এমনকি বাইরের দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও করছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি ইতিমধ্যেই অনেকটা নেপথ্য থেকে দলের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছেন। 

কাদেরের গুরুত্ব কমছে, বাড়ছে তিন নেতার

এই নতুন ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তিনি ভারতে থাকলেও গত দশ মাসে দলীয় সভাপতির সঙ্গে তার দেখা হয়নি। শেখ হাসিনা এখন তিনজন নেতার ওপর বেশি ভরসা করছেন: আসাদুজ্জামান খান কামাল, আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক। তারা সবাই বর্তমানে কলকাতায় আছেন এবং সায়মা ওয়াজেদ তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। অন্যদিকে, সজীব ওয়াজেদ আমেরিকা থেকে দলের অনুকূলে ‘ন্যারেটিভ’ বা বয়ান তৈরি এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দলের বক্তব্য তুলে ধরার কাজটি করছেন। 

কেন এই মডেল?

দিল্লির প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিনোদ শর্মা মনে করেন, আওয়ামী লীগের জন্য এই মডেলটি ‘স্বাভাবিক পছন্দ’। তিনি বলেন, ভারতের কংগ্রেসের মতোই আওয়ামী লীগও একটি পরিবারকেন্দ্রিক দল, তাই দলের নেতৃত্ব ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’ থেকেই আসবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি-র সঙ্গে শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তবুও বিজেপি-র মডেল আওয়ামী লীগের জন্য উপযুক্ত নয় বলে তিনি মনে করেন। 

আওয়ামী লীগ এখন তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে তাদের নেতৃত্বকে নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা তার ছেলেমেয়েদের সামনে নিয়ে আসছেন। এই পদক্ষেপ আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে কতটা এগিয়ে নিতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

Link copied!