ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব নারী শিক্ষার্থী অগ্রভাগে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম উমামা ফাতেমা। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া স্বৈরাচার বিরোধী এই আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসের মাঝেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিছিল করার জন্য উমামার সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন সকল মহল। শেখ হাসিনার পতনের পর জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন তিনি। সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম ২ আসন থেকে নির্বাচন করার।
চট্টগ্রাম ২
চট্টগ্রাম ২ আসনটি বর্তমানে ফটিকছড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে বিএনপির ডাকসাইটে নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর মূলত এখানে উল্লেখযোগ্য কোন নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি দুই দফা নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার নির্বাচিত হন। যদিও এই আসনে এখন বিএনপি সক্রিয় কিন্তু নির্দিষ্ট কোন প্রার্থী না থাকায় ইতোমধ্যে দলীয় কোন্দলের কথাও জানা গেছে। তবে এখানে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে কিছু ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী প্রচারণাও শুরু করেছে।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি নির্বাচনে ৩ জন দায়িত্ব পালন করেন এই আসনে। এই আসনে বিএনপির দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী তিন মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। এল কে সিদ্দিকী ও সাকা চৌধুরী দুজনই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিএনপির হয়ে এই আসন থেকে জয় লাভ করেন। তবে বর্তমানে এই আসনের প্রার্থীতা চূড়ান্ত না থাকার ফলে বিএনপির মধ্যে চলছে একটু দ্বন্দ। সেই সাথে এই আসনে বনের গাছ কেটে নেয়া, জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও অন্যান্য কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএনপির নাম ব্যবহার করেই এগুলো করা হচ্ছে। ফলে আভ্যন্তরীণ কোন্দল এই আসনকে ঘিরে এখন চরম পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে ২০১৪ ও ১৮ এর নির্বাচনে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশার মাইজভান্ডারি আওয়ামী জোটের কারণে নির্বাচিত হন। ২০২৪ আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার যিনি ওমানে আটক ছিলেন সে জয় লাভ করে। চলুন জেনে আসি এই আসনে কোন সময়ে কে নির্বাচিত হয়েছিল। আর ভোটারের ট্রেন্ড কোন দিকে।
এই আসনের ভোটের চিত্র
চট্টগ্রাম ২ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯০। এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ১ লাখ ৩৭০ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তরমুজ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৮৭ ভোট। ফুলেরমালা প্রতীক প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী পেয়েছেন ২১৩ ভোট পেয়েছেন।
তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন মহাজোটের শরিক ত্বরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৩০ ভোট। ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকে সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী পেয়েছেন ১০ হাজার ১৭৪ ভোট।
এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে ত্বরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৭ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান আনারস প্রতীকে পান ১২ হাজার ৪৩৩ ভোট ভোট।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৩ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এটি এম পেয়ারুল হক পান ৯২ হাজার ২২৬ ভোট।
এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী এল কে সিদ্দিকী। তিনি ৬৭ হাজার ৫১২ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম আবুল কাশেম পান ৪৬ হাজার ৪৫ ভোট ।
তবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করেছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবি এম আবুল কাশেম। সে সময় তিনি ভোট পান ৪৫ হাজার ৪৭৮। তখন এল কে সিদ্দিকী আফাজ উদ্দিন মোল্লা পান ৪৩ হাজার ১২১ ভোট।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী এল কে সিদ্দিকী। তিনি ৩৬ হাজার ৮৫৫ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম আবুল কাশেম পান ২৮ হাজার ৯২৮ ভোট।
উমামা ফাতেমার সম্পর্কে যা জানা যায়
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব নারী শিক্ষার্থী অগ্রভাগে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের নারী উমামা ফাতেমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া স্বৈরাচার বিরোধী এই আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সম্পাদক ছিলেন।
মূলত চট্টগ্রাম ২ আসনটি বিএনপির দুইজন হেবিওয়েট প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির একক আধিপত্য বজায় নেই। বর্তমানে বিএনপি চট্টগ্রাম উত্তর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমীর ও ফটিকছড়ি উপজেলার আহ্বায়ক কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার (অব:) মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছে।
এদিকে সালাউদ্দিন কাদেরর পুত্র হুম্মাম কাদেরও এই আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন। এদিকে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিনকে এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই আসনে ধর্মী ভিত্তিক দলগুলো কখনও ক্ষমতায় না গেলেও প্রতিবারই বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে থাকে। ইসলামী ফ্রন্টের সাথে জামায়াত জোট বাধলে তাদের শক্ত অবস্থান হতে পারে চট্টগ্রাম ২ আসন। ফলে উমামা ফাতেমার লড়াইটা জামায়াতে ইসলামীর সাথে হতে পারে।