দেশে করোনাকালে হ্রাস পেয়েছে শিশু জন্মহার

তুহিন কান্তি দাস

আগস্ট ১৮, ২০২১, ০৭:০৭ পিএম

দেশে করোনাকালে হ্রাস পেয়েছে শিশু জন্মহার

করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশে কমে এসেছে শিশু জন্মহার। সরকারি হিসেবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত ২০১৯-২১ সালের জন্ম নেওয়া নবজাতকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী হলে সন্তান জন্মদানের হার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় নিম্নগামী হয়।

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ভয়াবহ মাত্রায় পৌছায় ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন মাসে এবং ২০২১ সালে আবার ভয়াবহ মাত্রায় উন্নীত হয় এপ্রিল-জুলাই মাসেই। এই সময়ে সরকারি হিসেবে মোট নবজাতক জন্মদানের সংখ্যা অন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে।

২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন মাস যখন পৃথিবী করোনা সংক্রমণ মুক্ত ছিল তখন মানুষের প্রজনন প্রক্রিয়াও ছিল স্বাভাবিক। দ্য রিপোর্ট ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসের সন্তান জন্মদান সংখ্যার সাথে করোনার ঝুঁকিপূর্ণ  সময়কালীন পরবর্তী ২০২০ এবং ২০২১ সালের একই সময়ের সন্তান জন্মদান সংখ্যার তুলনামূলক অনুসন্ধান পরিচালনা করে। অনুসন্ধানে জানা যায় করোনাকালীন সময়ে মানুষের স্বাভাবিক শিশু সন্তান জন্মদান যথাক্রমে ২০২০সালের এপ্রিল-জুন মাসে কমে আসে ১৫.৪৩ শতাংশ। ২০২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসে ২০২০ সালের তুলনায় এক শতাংশ কমেছে যার মানে মোট শিশু জন্মদান এক শতাংশ বেড়ে গেছে এই সময়ে। ২০১৯ সালের তুলনায় মোট শিশু জন্মদান কমেছে ১৪.১৯ শতাংশ।

শিশু জন্মহারের তুলণামূলক চিত্র
শিশু জন্মহারের তুলণামূলক চিত্র

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন মাসে সরকারি হিসেবে জন্ম নিয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৪ নবজাতক, ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩৭ নবজাতক এবং ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৭ নবজাতক। এই তিন মাসে বাংলাদেশে মোট ৪ লাখ ২৪ হাজার ২২৪ জন্মগ্রহণ করা শিশুর তথ্য পাওয়া যায়।

২০২০ সালের এপ্রিল-জুন মাসে করোনার প্রথম ঢেউয়ের ভয়াল আতংকের সময়ে বাংলাদেশে জন্ম হয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬২১ নবজাতক, ১ লাখ ২০ হাজার ৪৮৪ নবজাতক এবং ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৮২ নবজাতকের। যার মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৭। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন মাসের তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন মাসে ৬৫ হাজার ৪৮১ নবজাতক কম জন্ম গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন মাসের তুলনায় ২০২০ সালের এই তিন মাসে ১৫.৪৩ শতাংশ নবজাতক কম জন্মেছে।

আবার ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৮৫, মে মাসে ১ লাখ ২১ হাজার ৫৪৬ এবং জুন মাসে ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩১ নবজাতকের জন্ম হয়েছে যার মোট সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬২। ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন মাসের তুলনায় ২০২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসে জন্ম নেওয়া নবজাতকের সংখ্যা কমে এসেছে ৬০ হাজার ২২৬। ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন মাসের তুলনায় ২০২১ সালে ১৪.১৯ শতাংশ কম নবজাতক জন্মগ্রহণ করেছে। তবে ২০২০ সালের তুলনায় নবজাতক জন্মের হার প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে।

শিশু জন্মের তুলণামূলক চিত্র
শিশু জন্মের তুলণামূলক চিত্র

বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনার প্রথম ঢেউয়ে বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট আতংকিত হয়ে যায়। করোনার সংক্রমণ আতংকে  সরকারিভাবে প্রথম লকডাউনের ভেতর কার্যত মানুষ ঘরবন্দী হয়ে যায়।

এ বিষয়ে গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত চিকিৎসকদের জাতীয় ফোরাম অবসটেট্রিক্যাল এন্ড গায়নিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)-র সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. গুলশান আরা দ্য রিপোর্টকে জানান, করোনা সংক্রমণের ফলে মানুষের স্বাভাবিক কর্ম প্রক্রিয়া যেমন ব্যাহত হয়েছে তেমনি প্রজনন প্রক্রিয়ায়ও। এই নতুন অভিজ্ঞতার কারণেই হয়তো মানুষ সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টিকে অতিরিক্ত ঝুঁকি হিসেবে মনে করেছে। সেই সঙ্গে এই মহামারীর মধ্যে মানুষ আর্থিকভাবে একটা বড় ঝামেলায় পড়েছে। যার কারণে হয়তো হোম ডেলিভারির দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়েছে যার ডাটা সরকারি হিসেবে নেই।

সরকার নিয়োজিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের (সিলেট বিভাগ) সদস্য জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সালের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রথম দিকে করোনার সংক্রমণের মাঝে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞদেরই যথেষ্ট বেগ পোহাতে হয়েছে। সাধারণ মানুষকেও সন্তান নেয়ার বিষয়টি দ্বিতীয় বার ভাবতে হয়েছে।

'করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগামী সময়ে মানুষ চেষ্টা করে সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এড়িয়ে চলতে। চেষ্টা করে মহামারির মাঝে বাড়তি ঝামেলা না নিতে। জীবন যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে সন্তান গ্রহণের মতো সেনসিটিভ সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধাবোধ কাজ করে।'-তিনি যুক্ত করেন।

Link copied!