করোনার উৎস সম্পর্কে মার্কিন প্রতিবেদন প্রত্যাখান চীনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নভেম্বর ১, ২০২১, ০৩:৩৭ এএম

করোনার উৎস সম্পর্কে মার্কিন প্রতিবেদন প্রত্যাখান চীনের

মহামারি করোনাভাইরাসের উৎস সংক্রান্ত মার্কিন প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসাবে আখ্যায়িত করে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের তীব্র সমালোচনা করেছে চীন। সেই সাথে এভাবে চীনের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।

রবিবার (৩১ অক্টোবর) মার্কিন ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে চীনা ভাইরাস বলে ব্যাঙ্গ করেছেন। এমনকি তিনি বার বার চীনকেই এজন্য দোষারোপ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনও ট্রাম্পের দেখানো পথেই হাঁটছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি প্রায় ৯০ দিনের পর্যালোচনা শেষে  একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেও চীনকেই দায়ী করা হয়েছে।

বিবৃতিতে ওয়েনবিন বলেন, সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সদস্যরা কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে একটি তথাকথিত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি একটি মিথ্যা প্রতিবেদন। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। চীনের ওপর অপবাদ ও আক্রমণের জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ওই বিবৃতি প্রকাশ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বেইজিং।

এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে চীনের তীব্র আপত্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বেইজিং। ওয়েনবিন আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় জোর দিয়ে বলেছি যে, করোনাভাইরাসের উৎস শনাক্ত করা একটি জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয় যা, যৌথ গবেষণার মাধ্যমে সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে করা উচিত এবং একমাত্র এভাবেই তা সম্ভব।

কিন্তু বিজ্ঞান ও সত্যকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক কারসাজি এবং গোয়েন্দাদের দিয়ে উৎস খুঁজতে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। কোনো প্রমাণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র চীনের নামে অপপ্রচার এবং দোষারোপের উদ্দেশ্যে একের পর এক গল্প তৈরি করছে। তাদের উদ্দেশ্য কোভিডের উৎস খোঁজার নামে চীনের ওপর দোষ চাপানো এবং রাজনৈতিক ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া। কোভিডের উৎস খুঁজতে গোয়েন্দাদের নিযুক্ত করার বিষয়টি রাজনীতিকরণেরই সুস্পষ্ট প্রমাণ।

উৎস খোঁজার ক্ষেত্রে চীনকে স্বচ্ছ বা সহযোগী না হওয়ার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন বলছে, এটি নিছক অর্থহীন কথা। উৎস শনাক্তকরণে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকভাবে সহযোগিতার ভিত্তিকে চীন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং এ ধরণের সহযোগিতায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে তারা। স্বচ্ছ নীতির ভিত্তিতে করোনার উৎস শনাক্তকরণ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য দু’বার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞদের চীনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক এবং চীনা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ গবেষক দল চীনে ২৮ দিন গবেষণা চালিয়েছে এবং নির্ভরযোগ্য, পেশাদার ও বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

চীনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রই এই বিষয়ে স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল এবং সহযোগী ভূমিকা পালন করছে না। তারা সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। সারাবিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে এর উত্তর দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও সতর্ক করে তারা বলছে, উৎস শনাক্তকরণকে রাজনীতিকরণ কোনো ফলাফল এনে দেবে না। উৎস শনাক্তকরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিবেশকে বিষাক্ত করে অথবা বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সংহতিকে অবমূল্যায়ন করে এমন কিছু করা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় বিজ্ঞানভিত্তিক উৎস শনাক্তকরণ ও সহযোগিতার সঠিক পথে ফিরে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

Link copied!