করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের আজ তৃতীয় দিন চলছে। রাজধানীসহ সারাদেশে আজও কঠোর এ লকডাউন পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ তৎপর দেখা গেছে।
শুরুর দুইদিন কঠোর কড়াকড়ির মধ্যে সীমিত পরিসরে চলাচল করেছে মানুষ ও যানবাহন। কিন্তু তৃতীয় দিনে অনেকটা ঢিলেঢালার মতো পালন হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। যদিও লকডাউন বাস্তবায়নে চেকপোস্ট বসিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
শুক্রবার(১৬ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে মানুষ ও গাড়ির উপস্থিতি গত দুই দিনের তুলনায় বেশি। পুলিশ জরুরি সেবা ছাড়া অন্যান্য গাড়িকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কঠোর চেষ্টা তেমন চোখে পড়েনি।
এছাড়া সড়কে চলাচলকারী লোক যদি জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদেরই শুধুমাত্র চেকপোস্ট অতিক্রম করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আর যারা জরুরি সেবার আওতায় নন তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গলিতে নির্দিষ্ট স্থান পর পর বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধক গড়ে তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে চলাচল করতে পারছে রিকশাসহ ছোট বাহন। শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা লোকদের চলাফেরা করতে দিচ্ছেন।
তবে এদিন ব্যাংকসহ কয়েকটি জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় কিছু মানুষকে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলেই নগরবাসীকে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।
সরকার ঘোষিত বিধি-নিষেধ সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে রাজধানীর পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথের প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে সর্বাত্নক এ লকডাউন আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকবে। গত সোমবার ( ১২এপ্রিল) সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ সপ্তাহব্যাপী বিধিনিষেধ চলাকালে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে বাইরে যেতে হলে অনলাইনে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বের হতে হবে।
সেদিনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, করোনার বিস্তার রোধে সাত দিনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি পণ্য পরিবহন করা যাবে; উৎপাদন ব্যবস্থা চালু থাকবে; জরুরিসেবা দেয়া যাবে। শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রাখতে পারবে। সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্তস্থানে কাঁচাবাজার খোলা থাকবে এবং বাজার করা যাবে।
জরুরি পরিষেবার মধ্যে রয়েছে কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম চলবে। টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি) সেবা দেয়া যাবে।
গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) কর্মীরা পেশাগতদায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার সংশ্লিষ্ট কাজ করা যাবে। এছাড়া টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা নেয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।
এসময়ে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে। লকডাউনের মধ্যে জনসাধারণকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখা যাবে না। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখতে হবে।