হার দিয়ে যাত্রা শুরু: ইতিহাস পক্ষে রাখতে পারল না আয়োজক কাতার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নভেম্বর ২১, ২০২২, ০৬:৪৮ এএম

হার দিয়ে যাত্রা শুরু: ইতিহাস পক্ষে রাখতে পারল না আয়োজক কাতার

আয়োজক দেশ হিসেবে গ্যালারি ভর্তি ছিল নিজেদের দর্শক। এই দর্শকেরা কিছুটা হলেও প্রভাব রাখে খেলায়। ইতিহাসও স্বাগতিকদের পক্ষে। শুধু উদ্বোধনী ম্যাচ নয়, কাপও জেতার ইতিহাস আছে স্বাগতিকদের। কিন্তু স্বাগতিক হওয়ার সেসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে দাপট দেখাতে পারল না মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়া কাতার। পুরো ম্যাচে শাসন করে খেলে ইকুয়েডর। সেটি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে দুটি গোল হজম করে মরুর দেশটি তাঁদের বিশ্বকাপ শুরু করল।

Qatar

ইতিহাসের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, এর আগে কোনো আয়োজক দেশই তাঁদের প্রথম ম্যাচ হারেনি। এ রেকর্ডে উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নেমেছিল কাতার। সুযোগও ছিল। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও কাতারকে আশা দেখাচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচের শুরুতেই গোল হজম করার উপক্রম। কিন্তু নতুন প্রযুক্তির আশ্রয়ে অফসাইডের বাঁশিতে বাঁচা গেলেও ইকুয়েডরকে বেশি সময় আটকানো যায়নি। কিছুক্ষণ পরই জাল খুঁজে নিয়েছে দলনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া, পরের গোলটিও এলো তাঁর পা থেকে। তাঁর জোড়া গোলে বিশ্বকাপে উড়ন্ত সূচনাই করলো ইকুয়েডর।

রবিবার রাতে আল বাইত স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতারকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ইকুয়েডর। লাতিন অঞ্চলের দেশটির জয়ে বদলে গেল বিশ্বকাপের দীর্ঘদিনের ইতিহাসও। ফুটবল বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে কাতারই প্রথম আয়োজক দেশ, যারা নিজেদের প্রথম ম্যাচ হারলো। আগের ২১ আসরের মধ্যে ১৬ আয়োজক দেশ তাদের প্রথম ম্যাচ জেতে, ৬টি আয়োজক দেশ ড্র করে।

স্বাগতিক হওয়ায় দাপট দেখাবে কি, পুরো খেলা জুড়েই নিস্প্রভ ছিল কাতার। পুরো ম্যাচে তাঁদের শাসন করেছে ইকুয়েডর। ম্যাচের ৫৩ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে তাঁরা। গোলমুখে ইকুয়েডরের নেওয়া ৬টি শটের মধ্যে ৩টি লক্ষ্যে ছিল। কাতারের নেওয়া ৫টি শটের  একটিও লক্ষ্যে ছিল না। এ নিয়ে টানা সাত ম্যাচে নিজেদের জাল অক্ষত রাখলো ইকুয়েডর।

খেলার তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো ইকুয়েডর। দারুণ আক্রমণে কাতারের জালে বল পাঠায় তাঁরা। কিন্তু হেড থেকে করা ভ্যালেন্সিয়ার গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করেন রেফারি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় ফেলিক্স তোরেসের ক্রসে হেড দেওয়ার সময় অফসাইডে ছিলেন মাইকেল এস্ত্রাদা।

কিন্তু ইকুয়েডরকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেনি কাতার। ১৬তম স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ভ্যালেন্সিয়া। ডি-বক্সে ভ্যালেন্সিয়াকে কাতারের গোলরক্ষক সাদ আল সাইব ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ৩১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ইকুয়েডর। আনহেলো প্রিকাইদোর ক্রস থেকে লাফিয়ে দারুণ বল জালে জড়ান ভ্যালেন্সিয়া। বিশ্বকাপে চার ম্যাচে এটা তাঁর পঞ্চম গোল।

প্রথমার্থে আরও কয়েকটি আক্রমণ সাজালেও গোল করতে পারেনি ইকুয়েডর। ৫৫তম মিনিটে আরও এগিয়ে যেতে পারতো ইকুয়েডর। এ সময় দারুণ সুযোগ পান রোমারিও ইবারা। কিন্তু এ যাত্রায় দলকে বাঁচান কাতারের গোলরক্ষক সাইব। রোমারিওর নেওয়া জোরালো শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। ৮৬তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পান বদলি হিসেবে নামা কাতারের মোহামেদ মুনতারি। বাসাম আল রায়ির নিখুঁত থ্রু বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অসাধারণ এক ভলি করেন তিনি। কিন্তু অল্পের লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ থেকে যাওয়া কাতার শেষ মুহূর্তে ব্যবধান কমানোর আরেকটি সুযোগ পায়। যদিও সুবর্ণ এই সুযোগটি নষ্ট করে তাঁরা। হাসান আল হায়দোসের অসাধারণ এক ক্রসে ইকুয়েডরের গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান আলমোয়েজ আলী। কিন্তু হেডের চেষ্টা করা আলী বলে ঠিকভাবে সংযোগ করতে পারেননি। ২-০ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় স্বাগতিকদের। এই হারে আসলে বিশ্বকাপেরই ইতিহাস বদলে দিল তাঁরা, যে ইতিহাস তাঁরা হয়তো মনেও রাখতে চাইবে না।

Link copied!