বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন গেল শুক্রবার। বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ফিল্মি ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে নির্বাচন। ভোটপাগল বাংলাদেশে এই নির্বাচন নিয়ে আসে নজিরবিহীন এক উৎসবের আমেজ। যেন ’ক্ষুধার্ত কালে-ভদ্রে অপরের খাওয়া দেখেও শান্তি পায়’।
নির্বাচনকে ঘিরে যতটা উৎসব আর উত্তেজনা ছিল, তার প্রায় সিংহভাগই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে। কয়েক সপ্তাহ ধরে নেটিজেনরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো নির্বাচন নিয়ে।
কেউ কারও পক্ষ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন, কেউ কোনো কোনো প্রার্থীর বক্তৃতার ক্লিপ, ছবি নিয়ে ট্রল, মিম বানিয়েছেন। তাতে কেউ লাইক দিয়েছেন, কেউবা হা হা। কেউ লাভ, কেউবা কেয়ার।
কিন্তু সব প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার ভরকেন্দ্রে ছিলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। খলনায়ক মিশার সাথে একই প্যানেলে নির্বাচন করলেও নায়িকা নিপুণকে হারিয়ে জিতেছেন জায়েদ একাই। সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন আরেক নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। নির্বাচনের এই তথ্য সবারই জানা।
নির্বাচনের আগে জায়েদ খানকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যপক হাসি-তামাশা করা হলেও, চলচ্চিত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর এখন প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
অনেকেই বলছেন, রাজনীতিতে রীতিমতো পাকা খেলোয়াড় জায়েদ। সূক্ষ্ম চালে হারিয়ে দিয়েছেন নায়িকা নিপুণকে। নিপুণের চেয়ে জায়েদের সাংগঠনিক যোগ্যতা অনেক বেশি বলেও দাবি ভক্ত-সমর্থকদের।
জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এবং দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশিদ যেমনটা জায়েদ খানকে নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন শনিবার রাতে। সেখানে তিনি লিখেছেন, “জায়েদ খানের একটা সিনেমার নাম বলুন না। একটু দেখতে চাই। খুব কষ্ট হবে?”
এই পোস্টে কমেন্ট করেছেন অনেকেই। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সেখানে একটি মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ”ভালো নায়ক না হলে কি নেতৃত্ব দেওযা যাবে না? আর ন্যুড অভিনয় করে মনোরঞ্জন করতে পারলে কি নেতৃত্বের জন্য ফিট?”
এই কমেন্টের প্রতিউত্তরে (রিপ্লাই) একজন লিখেছেন, ”জায়েদ খান একজন দক্ষ সংগঠক জয় হয়েছে কর্মের, কত অপবাদ, কত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, কত সমালোচনা, কত হাসি ঠাট্টা… সবকিছু হাসিমুখে মোকাবেলা করে উনার জয় ছিনিয়ে এনেছে, শুভকামনা রইল ইলিয়াস কাঞ্চন ও জায়েদ খান এ-র জন্য।”
জায়েদ খানের সংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা করে একজন লিখেছেন ভাল অভিনেতার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালো নেতা। জায়েদ খানের মধ্যে ভালো নেতার স্বভাব আছে বলে দাবি করেছেন জায়েদ ভক্তরা।
একজন লিখেছেন, ”ভালো নায়ক হিসেবে নয় ভালো সংগঠক হিসেবে জায়েদ খান খুব জনপ্রিয়, জনপ্রিয় অনেক নায়ক আছে কিন্তু জনপ্রতিনিধিত্ব করার মতো সাহস সবাই রাখে না।”
তবে, কেউ কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, তারা হিরো আলমকে চিনলেও জায়েদ খানকে চেনেন না।
মোহাম্মদ ফারুক মোক্তার নামে একজন লিখেছেন, ”আসল কথা হচ্ছে, চলচ্চিত্র সমিতি না থাকলে আমি জানতেই পারতাম না জায়েদ খান একজন নায়ক!”
কেউ আবার বলছেন, রাজনীতি করা রাজনীতিকের কাজ। আর অভিনেতার কাজ অভিনয় করা। যেমন শিক্ষকের কাজ শিক্ষকতা করা। প্রতিটি পেশার মানুষেরই নির্দিষ্ট কিছু কাজ রয়েছে। সবাই রাজনীতি করলে পেশাগত দায়িত্ব পালন ব্যহত হতে পারে বলে মনে করেন তারা।